থাইরয়েড সমস্যায় অনেক নারী-পুরুষ ভুগে থাকেন। তবে নারীদের সংখ্যা বেশি; যারা হাইপোথাইরয়েডে ভুগছেন। এ সমস্যা যেন সারাজীবনের। থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হরমোনের হেরফেরে অনেকের পিরিয়ডের সমস্যা হয়।
সেইসঙ্গে অনেকেরই চুল পড়ে যায়, পাশাপাশি ক্লান্তিভাব ও অন্যান্য সমস্যাও তো থাকেই। পাশাপাশি ওজন বাড়তে থাকে; আবার অনেকের ওজন কমেও যায়। থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সারাজীবন ওষুধ খেতে হয়।
এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে নারীদের সন্তান ধারণেও সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। থাইরয়েড সমস্যা সমাধানে শুধু ওষুধের উপরেই নির্ভরশীল হলেই হবে না বরং শারীরিকভাবেও ফিট থাকতে হবে। এজন্য নিয়মিত যোগাভ্যাস করতে হবে।
বিশেষ করে কয়েকটি ইয়োগা আসন করলে থাইরয়েডের সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে। এমনকি এই আসনগুলো নিয়মিত করলে থাইরয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তিও পেতে পারেন।
এই কয়েকটি আসন থাইরয়েডের সমস্যা কমাতে বা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন বা টিএসএইচ ক্ষরণ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। জেনে নিন কোন আসনগুলো অনুশীলন করবেন-
উষ্ট্রাসন
হাঁটুর উপর সোজা হয়ে বসুন। দুই পা পিছনের দিকে থাকবে। পিছন দিকে ঝুঁকে দুই হাত দিয়ে গোড়ালি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। গোড়ালি ছুঁতে পারলেই উষ্ট্রাসন সম্পন্ন হবে। তবে প্রথমেই আপনি দু’হাত দিয়ে গোড়ালি ছুঁতে পারবেন না।
তাই প্রথমে কোমরে হাত দিয়ে ব্যাক বেন্ড করা শুরু করুন। এক হাত দিয়ে গোড়ালি ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। এভাবে ২ মিনিট থাকুন। থাইরয়েডের জন্য যোগাসন করার সময় এই আসনটি বাদ দেবেন না।
বিপরীত করণী
উষ্ট্রাসন করার পর দুই পা সামনে ছড়িয়ে দিন। তারপর শুয়ে পড়ুন। এরপর দুই কোমরের নিচে হাত দিন। যাতে আপনি কোমরের ব্যালেন্স হাত দিয়ে রাখতে পারেন। এই আসনটি করতে চেষ্টা করুন দেওয়ালের সামনে শুতে।
এরপর কোমর থেকে শরীরটি তুলে নিতে হবে। পা শূণ্যে ভাসিয়ে পিছন দিকে ফেলার চেষ্টা করুন। সম্পূর্ণ মাটিতে ছোঁয়াবেন না। অন্তত ৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে আপনার পা থাকবে।
এ সময় ব্যালেন্স না রাখতে পারলে কাউকে ধরতে বলুন। এর ফলে আপনার থুতনি গলায় ছোঁবে। এতে আপনার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডেও প্রভাব পড়়বে। প্রথমে অন্তত ১ মিনিট এভাবে থাকার চেষ্টা করুন। পরবর্তীতে সময় বাড়ান।
সর্বাঙ্গাসন
এই আসনও বিপরীত করণীর মতোই। তবে এক্ষেত্রে কোমরের উপর দুই পা শূণ্যে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে থাকে। এতেও আপনার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে ভালো প্রভাব পড়ে। প্রথমেই একা করতে যাবেন না। ঘাড়ে ব্যথা পেতে পারেন। এজন্য সঙ্গে কাউকে রাখুন।
মৎস্যাসন
সর্বাঙ্গাসন করার পর দুই পা আবার সামনে ছড়িয়ে দিন ও পদ্মাসন করে নিন। পদ্মাসনেই শুয়ে থাকুন। এরপর মাথা মাটি থেকে সামান্য তুলে বেন্ড করে মাটিতে রাখুন।
এতে আপনার ঘাড় থেকে একটি বেন্ড তৈরি হবে এবং থাইরয়েড গ্ল্যান্ডেও প্রভাব পড়বে। এবার দু’হাত রাখুন পেটের উপর। অন্তত ২ মিনিট করে এই আসনটি করুন।
সেতুবন্ধাসন
এই আসনটি করার সময়ও শুয়ে থাকতে হবে। হাঁটু থেকে দুই পা মুড়ে নিন প্রথমে। তারপর দুই হাত দিয়ে গোড়ালি ধরুন। আস্তে আস্তে কোমর থেকে শরীরটা তুলে দিন। এতেও থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে প্রভাব পড়ে। অন্তত ৩ মিনিট এভাবে থাকুন।
সবশেষে অবশ্যই শবাসন করতে হবে। তবে এই আসনগুলি করার সময় ঘাড়ে একটি চাপ পড়ে। তাই প্রথমে সামান্য ব্যথা হতে পারে ঘাড়ে। খুব সতর্কতার সঙ্গে আসনগুলো করতে হবে। থাইরয়েডের সমস্যায় যোগাসন বেশ উপযোগী। তাই আজ থেকেই শুরু করুন কার্যকরী এই যোগাসনগুলো।