প্রোটিনের অন্যতম উৎস ডিম আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভাজা, পোচ, বা তরকারি – নানাভাবে আমরা ডিম খেয়ে থাকি। তবে ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণা এবং অভ্যাস আমাদের অজান্তেই এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। ডিম কি কাঁচা খাওয়া ভালো, নাকি রান্না করে? আর একবার রান্না করা ডিম কি দ্বিতীয়বার গরম করা উচিত? চলুন, পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতামত জেনে নিই।
কাঁচা ডিম বনাম রান্না করা ডিম: কোনটি বেশি উপকারী?
আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, কাঁচা ডিম খেলে তার পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকে। এমনকি দুধের সঙ্গে কাঁচা ডিম মিশিয়েও অনেকে খেয়ে থাকেন। তবে, দ্য জার্নাল অফ নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা এই ধারণার বিপরীতে এক চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের প্রোটিন গ্রহণ এবং তা হজম, দু’দিক থেকেই কাঁচা ডিমের চেয়ে রান্না করা ডিম অনেক বেশি এগিয়ে।
রান্না করা ডিমে প্রোটিনের উপস্থিতি প্রায় ৯১ শতাংশ, যেখানে কাঁচা ডিমে এই পরিমাণ মাত্র ৫০ শতাংশ। কাঁচা ডিমে সুপাচ্য বা হজমসাধ্য প্রোটিনের পরিমাণ যেখানে মাত্র ৩ গ্রাম, সেখানে রান্না করা গোটা ডিমে তা দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৬ গ্রাম।
রান্নার পর ডিমের পুষ্টিগুণ কেন বাড়ে?
ডিম রান্নার সময় তার পুষ্টিগুণের গঠনগত পরিবর্তন হয়, যা হজমসাধ্য প্রোটিনের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। ডিমে থাকা ট্রিপসিন এনজাইম প্রোটিন ভেঙে হজমে সহায়তা করে। কিন্তু কাঁচা ডিমে থাকা অন্যান্য এনজাইম বা উৎসেচক ট্রিপসিনের কাজে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে প্রোটিনের সহজপাচ্যতা ব্যাহত হয়। অর্থাৎ, রান্নার মাধ্যমে ডিমের প্রোটিন আমাদের শরীর আরও সহজে শোষণ করতে পারে।
একবার রান্না করা ডিম কি দ্বিতীয়বার গরম করা উচিত?
রান্না করা ডিমে বাড়তি পুষ্টিগুণ পেলেও, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের অনেকেই উপেক্ষা করি – একবার রান্না করা ডিম দ্বিতীয়বার গরম করা একেবারেই উচিত নয়। পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিম দ্বিতীয়বার গরম করলে তার প্রোটিন নষ্ট হয়ে যায়। বারবার গরম করার ফলে ডিমের মধ্যে নানা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, যা পেটের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
এছাড়াও, ডিমের মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিনে নাইট্রোজেন থাকে। ডিম দ্বিতীয়বার গরম করলে এই নাইট্রোজেন অক্সিডাইজড হয়, যা ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই, পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, ডিমের ঝোল বা অমলেট, কোনোটাই দ্বিতীয়বার গরম করে খাওয়া উচিত নয়।
উপসংহার:
ডিমের পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে চাইলে অবশ্যই রান্না করা ডিম খান, কিন্তু একবার রান্না করার পর তা আর দ্বিতীয়বার গরম করবেন না। আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষায় এই ছোট টিপসগুলো মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।