জীবনযুদ্ধে একা জয়ী হওয়া কঠিন। আর এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে জীবনসঙ্গীর ভূমিকা কতটা, তা নিয়ে এক নতুন সমীক্ষা চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে। এতদিন যা প্রবাদ ছিল, “প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন নারী থাকেন” – এবার বিজ্ঞানও সেই কথাকে সায় দিচ্ছে! সুখী দাম্পত্য শুধু ব্যক্তিগত আনন্দই নয়, পেশাগত সাফল্যেরও চাবিকাঠি।
বিশ্বের তাবৎ সফল ব্যক্তিরা তাদের অর্জনের পেছনে জীবনসঙ্গীর অপরিসীম সহযোগিতার কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তার স্ত্রীর অবদানের কথা বুক ফুলিয়ে বলতেন, যা সকলেরই জানা। কিন্তু এবার এই ধারণাকে বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে গবেষণা।
কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা: এক যুগান্তকারী তথ্য
যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক যুগান্তকারী গবেষণা এই সত্যকে আরও জোরালো করেছে। এই গবেষণায় স্পষ্ট দাবি করা হয়েছে, যে জীবনসঙ্গী (স্বামী বা স্ত্রী) তার পার্টনারের প্রতি সহযোগী মনোভাবাপন্ন, সেই পার্টনার জীবনে বেশি সফলতা অর্জন করেন। অর্থাৎ, আপনার জীবনের সাফল্যের অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কেমন মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন তার ওপর।
গবেষণায় ১৬৩ দম্পতির উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়। অংশগ্রহণকারীদের একটি সহজ ধাঁধা সমাধান করতে দেওয়া হয় এবং যারা জিতবেন, তাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়। গবেষণার ফলাফল ছিল চমকপ্রদ:
সহযোগিতার শক্তি: যেসব স্ত্রীরা (বা স্বামীরা) পুরস্কার জেতার আশায় তাদের স্বামীকে (বা স্ত্রীকে) পরামর্শ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেসব স্বামীরা (বা স্ত্রীরা) সহজেই ধাঁধার সমাধান করতে পেরেছেন। তাদের সাফল্যের হার ছিল অনেক বেশি।
নেতিবাচকতার প্রভাব: অন্যদিকে, যেসব স্ত্রীরা পুরস্কারের বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছেন কিংবা স্বামীকে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করেননি, তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েছেন।
গবেষকরা ছয় মাস পরে এই একই দম্পতিদের ওপর আবার পরীক্ষা চালান। দেখা যায়, যারা পুরস্কারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন এবং একে অপরের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ ছিলেন, তারা অন্যদের তুলনায় জীবনে বেশি সফলতা অর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, গবেষকরা দাবি করেন যে তারা অন্যদের চেয়ে বেশি সুখী এবং সুস্থ জীবনযাপন করছেন।
সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরাও একই ধরনের গবেষণা চালিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, একজন ব্যক্তির সাফল্য কেবল তার নিজের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে না, তার জীবনসঙ্গীও এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করেন।
সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ: সাফল্যের নেপথ্যে জীবনসঙ্গীর অনুপ্রেরণা
সেলিব্রিটি এবং বিশ্বখ্যাত নেতাদের মধ্যে এমন অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে তাদের জীবনসঙ্গী তাদের সাফল্যে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
২০১৭ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা বক্তৃতায় মার্ক জুকারবার্গ অত্যন্ত আবেগপ্রঘন হয়ে জানান, তার স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান সামাজিক বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছায় তার সঙ্গে কাজ করেন এবং তাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেন। জুকারবার্গ অকপটে স্বীকার করেন যে, তার জীবনের সফলতার পেছনে প্রিসিলার বিরাট অবদান আছে।
এই গবেষণা এবং বাস্তব উদাহরণগুলো স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, জীবনসঙ্গী কেবল একজন সঙ্গী নন, তিনি আপনার স্বপ্নপূরণের সহযাত্রী, আপনার আত্মবিশ্বাসের উৎস এবং আপনার সাফল্যের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। জীবনে সফল হতে চাইলে, জীবনসঙ্গীর প্রতি আস্থা রাখুন, তাকে সমর্থন করুন, আর দেখবেন আপনার জয়যাত্রা মসৃণ হয়ে উঠবে।