কলা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এক অতি পরিচিত ফল। এর পুষ্টিগুণ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কেন কলা সবসময় বাঁকা হয়? এই বিষয়টি আমরা প্রায়শই খেয়াল করলেও এর পেছনের কারণ নিয়ে গভীরভাবে ভাবি না। বিজ্ঞান কিন্তু এর এক দারুণ ব্যাখ্যা দেয়।
ফটোট্রপিজম, গ্র্যাভিটিজম এবং অক্সিনের খেলা
জীববিজ্ঞানের মতে, যেকোনো গাছের ফল বৃদ্ধির পেছনে ফটোট্রপিজম (Phototropism), গ্র্যাভিটিজম (Gravitism) এবং অক্সিন (Auxin)-এর মতো প্রক্রিয়াগুলি কাজ করে। আমরা জানি, মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে যেকোনো জিনিসের আকর্ষণ নিচের দিকে হয়। সেই যুক্তিতে কলাও নিচের দিকে ঝুলে থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি কলার কাঁদি নিচের দিকে ঝুললেও, কলাগুলো উপরের দিকে মুখ করে থাকে। এর পেছনেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য।
সূর্যালোকের ভূমিকা: নেগেটিভ জিওট্রপিজম
কলা গাছ সাধারণত খুব বেশি বড় হয় না। তাই বড় গাছের নিচে বা ঘন বাগানে কলাগাছ থাকলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক তাদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। এমনকি ফাঁকা জায়গায় থাকলেও কলাগাছের পাতা সূর্যালোকে ঢেকে রাখে ফলগুলোকে। আর এই সূর্যালোকের অভাব-ই কলার বাঁকা হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ।
বিজ্ঞান অনুযায়ী, কম সূর্যালোক পাওয়ার কারণে কলার কুঁড়ি থেকে ফল জিওট্রপিজম বা গ্র্যাভিটির বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়াকে নেগেটিভ জিওট্রপিজম বলা হয়। ঠিক যেমন আমাদের বাড়ির ভেতরের কোনো ফুল গাছ সূর্যের দিকে বেঁকে যায়, একই প্রক্রিয়ায় কলাও সূর্যমুখী বা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। কলার এই বাঁকা হওয়ার আসল ঘটনা এখানেই।
মাধ্যাকর্ষণ ও বৃদ্ধির টানাপোড়েন
যখন কলা একটু একটু করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, তখন মাধ্যাকর্ষণ প্রক্রিয়ার টানে কলা সামান্য মাটির দিকে বাঁকা হয়ে যায়। এরপর বাকি অংশ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বাড়তে বা মোটা হতে শুরু করে। আর এই দুই বিপরীতমুখী শক্তির টানাপোড়েনেই কলার আকৃতি বেঁকে যায় এবং আমরা এই পরিচিত বাঁকা কলা দেখতে পাই।
সুতরাং, কলার এই অনন্য আকৃতির পেছনে রয়েছে এক মজার বৈজ্ঞানিক কারণ, যা প্রকৃতির এক চমৎকার দৃষ্টান্ত।