বাঙালির বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে সযত্নে রাখা তুলসী গাছ কেবল পুজো-আচ্চার অনুষঙ্গ নয়, এটি এক দারুণ ভেষজ উদ্ভিদ। প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তুলসী পাতার মহিমা নানাভাবে বর্ণিত হয়েছে। চুল ও ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো পর্যন্ত, তুলসী পাতার উপকারিতা সীমাহীন। কিন্তু এই তুলসী কি আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে? আসুন জেনে নিই বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন।
তুলসী পাতার বহুমুখী উপকারিতা
ভরতের বৈদ্যনাথের ক্লিনিক্যাল অপারেশনস অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন ম্যানেজার ডা. আশুতোষ গৌতম-এর মতে, “তুলসীর তেল আমাদের শ্বাসযন্ত্রের ওপর দারুণ কাজ করে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা চাপ কমাতে, স্নায়ুকে শান্ত করতে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহায্য করে। এছাড়াও, তুলসীতে থাকা লিনোলেইক অ্যাসিড ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।”
শুধু তাই নয়, ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও তুলসী পাতার কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা চলছে। ‘১০১ টি ওজন কমানোর টিপস’ বইটিতে ডা. শিখা শর্মা লিখেছেন, “সকালে ৫-৬টি তুলসী পাতা শরীরকে বিষমুক্ত করে।”
যারা সরাসরি তুলসী পাতা খেতে পছন্দ করেন না, তারা তুলসী চা পান করতে পারেন। কয়েকটি তুলসী পাতা সারারাত জলে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে সেই জল পান করুন। অথবা, তুলসী পাতা ও সামান্য আদা দিয়ে ফুটিয়ে তুলসী চা বানিয়েও দিনের শুরুটা করতে পারেন।
ওজন কমাতে তুলসী কীভাবে সাহায্য করে?
সকালে তুলসী পাতা খেলে তা কয়েকটি নির্দিষ্ট উপায়ে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে:
বিপাক (Metabolism) বৃদ্ধি: তুলসী পাতা আপনার শরীরের বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে। আপনার শরীরের বিপাকীয় হারই নির্ধারণ করে সারাদিনে কত ক্যালোরি পোড়ানো হবে। তুলসী পাতা বিপাককে জোরদার করতে সাহায্য করে, যার ফলে দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করা সম্ভব হয়।
বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণ (Detoxification): তুলসী পাতা বা তুলসী চা একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসাবে কাজ করে। এটি রক্তকে পরিশোধন করে এবং শরীর থেকে সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। এর ফলেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। গত দিনের বিষক্রিয়া থেকে শরীরকে পরিষ্কার করে তুলসী পাতা আপনার নতুন দিনকে দারুণভাবে শুরু করতে সাহায্য করে।
হজম (Digestion) উন্নত করা: আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, আদা ও তুলসী আপনার পাচনতন্ত্রের জন্য দারুণ কাজ করতে পারে। একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক পাচনতন্ত্রই ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি। হজমের সমস্যা থাকলে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে, কারণ তখন শরীর পুষ্টি সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না এবং বর্জ্য নিষ্কাশন প্রক্রিয়াতেও প্রভাব পড়ে। এটি বিপাকীয় হারকেও কমিয়ে দিতে পারে, যা ক্যালোরিগুলোকে সঠিকভাবে পোড়াতে দেয় না। ডা. শিখা তার বইয়ে লিখেছেন যে, সকালে খালি পেটে তুলসীর রস (১৫-২০টি তুলসী পাতা থেকে তৈরি) কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম করতে পারে।