একাকিত্ব দূর করবেন কিভাবে বুঝে উঠতে পারছেন না? তাহলে পড়ুন

সাধারণ মানুষের উত্তর থেকে বাছাই করে একাকীত্ব দূর করার ৯টি উপায় তুলে ধরেছে, যা আপনারও একাকীত্ব দূর করতে পারে।\

১. এমন কিছু করুন যাতে মনোযোগ সরে যায়: একাকীত্ব একটি অস্থায়ী অনুভূতি। জীবনের বিভিন্ন পট পরিবর্তনে আমরা একাকী বোধ করি। সেটা হতে পারে নতুন কলেজ জীবন শুরু করা বা সম্পূর্ণ নতুন কোন স্থানে বসবাস শুরু করা।

বিভিন্ন সৃজনশীল কাজ একাকীত্বের কষ্ট থেকে আমাদের দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্ব বোধ ফিকে হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এমন কোন কাজ করুন যেটা আপনি পছন্দ করেন।

বিশেষ করে সেই কাজটি, যেটা আপনার মনোযোগ এতোটাই কেড়ে নেবে যে সময় কিভাবে কাটছে আপনি ভুলে যাবেন।

সেটা হতে পারে বই পড়া, কোন শখের চর্চা বা পছন্দের কোন কাজ করা। এই কাজগুলো আপনার শরীর ও মন দুই-ই ভাল রাখবে।

২) সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়া

এই সমাধানের বিষয়টি শুনতে একটু গতানুগতিক ঠেকবে। যদি আপনার একাকীত্বের কারণ আপনার আশেপাশে লোকজনদের সঙ্গে দেখা না করার জন্য হয় তবে এটি আপনার জন্য ভাল সমাধান হতে পারে। তবে এই সমাধান সবার জন্য নয়।

অচেনা কোনও স্থানে অচেনা কোন মানুষের সঙ্গে হঠাৎ কথা বলা শুরু করা সব সময় এতোটা সহজ নয়। এই কারণে একাকীত্বে ভোগা মানুষের জন্য এই উপায়টিকে জরিপের সর্বনিম্ন সহায়ক পরামর্শগুলোর একটি ধরা হয়।

যদি অপরিচিতদের সাথে কথা বলার বিষয়টি আপনাকে ভীত বা অপ্রস্তুত করে তাহলে, এমন একটি সংগঠন বেছে নিন যেখানে আপনি কাজের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক বা সৃজনশীল কিছু করতে পারবেন।

হয় কোন গানের দলে যোগ দিন অথবা কিছু তৈরি করা শিখুন। এতে করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কারো সঙ্গে কথা বলার চাপে থাকতে হবে না। সেইসঙ্গে নিজের পছন্দের কোন কাজ বেছে নেয়ায় আপনি হয়তো সেখানে এমন কাউকে পেয়ে যাবেন, যার সঙ্গে আপনার চিন্তা ভাবনা মিলে যাবে।

৩) ভাবনায় বদল

এই সমীক্ষায় মানুষের সহানুভূতির মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যারা নিজেদের একাকী দাবি করেন, তারা সমাজের অন্য মানুষের প্রতি অনেক বেশি সহানুভূতিশীল থাকেন।

বিশেষ করে তাদের প্রতি যারা কোন কষ্টকর সময় পার করছেন। সামাজিক দক্ষতা পরিমাপ করে দেখে গেছে যে, একজন একাকী মানুষ আর দশটা মানুষের মতোই দক্ষ ও সামর্থ্যবান।

তাই বিষয়টা এমন নয় যে যারা একাকীত্ব বোধ করেন তাদের নতুন করে সামাজিক দক্ষতা শিখতে হবে। তবে তারা পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বা মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে পারেন। এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে।

৪. কথোপকথন শুরু করুন

অপরিচিতদের কারো সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করার জন্য এক ধরণের মানসিক শক্তির প্রয়োজন।

কিন্তু এজন্য আপনাকে শুরুতেই গভীর কোন কথা বলতে হবে, এমনটা নয়। যুক্তরাজ্যে কথোপকথন শুরুর সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় হল আবহাওয়া। কেননা একেকজনের কাছে আবহাওয়ার ব্যাখ্যা একেক রকম।

আপনি দোকানে বা বাস স্টপে যে কারও সঙ্গে কথা শুরু করার জন্য বলতে পারেন যে আজকের আবহাওয়া বেশ “গরম / ঠাণ্ডা / আর্দ্র অথবা সুন্দর। তাই না?”

তবে এ উপায়টি কারো সঙ্গে গাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করবে না। এটা আপনাকে শুধুমাত্র অন্য মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। প্রতিবার যখন আমরা কারো সঙ্গে কথা বলি, সেটা যদি অপ্রাসঙ্গিকও হয় তারপরও আমরা এটা বুঝতে পারি যে আমরা সবাই একই বিশ্বে পাশাপাশি থাকছি।

৫) অনুভূতি বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে শেয়ার

এই সমাধানটির কথা সাধারণত তারাই বলেন যারা একাকীত্ব বোধ করেননা। এতে বোঝা যায় যে, এ ধরণের সমাধান দেওয়া যতোটা সহজ, বাস্তবে করা ততোটা সহজ না।

বিশেষ করে যারা তীব্র মাত্রায় একাকীত্বে ভোগে তাদের ক্ষেত্রে এই সমাধান মূল্যহীন। এখনও এমন অনেকে আছেন যাদের একাকীত্বকে ঘিরে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।

তবে ভাল খবর হল যে এখন অনেকেই নিজেদের একাকীত্বের বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী হচ্ছেন। আপনার ব্যাপারে অন্যের প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, এ নিয়ে আপনি হয়তো উদ্বিগ্ন হতে পারেন।

কিন্তু জরিপে দেখা গিয়েছে যে, মানুষ সাধারণত একাকীত্বে আক্রান্তদের ব্যাপারে খারাপ কিছু ভাবেন না। যারা একাকী নন, তাদেরকেও একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান খুঁজতে এই জরিপে সময় ব্যয় করতে দেখা গিয়েছে।

৬) প্রতিটি মানুষের ইতিবাচক দিকটি দেখার চেষ্টা করুন

জরিপে দেখা গিয়েছে যে যারা একাকীত্ব ভোগেন, তাদের অন্যের প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তিটা নড়বড়ে। তাই এই সমাধানটির মূল বিষয়বস্তু হল, মানুষের ভেতর থেকে এমন ভাল কিছু খুঁজে বের করা যেন তার প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে।

আপনি যদি মনে করেন যে কেউ আপনাকে তিরস্কার করেছে বা কটু কথা বলেছে। তাহলে ভেঙ্গে না পড়ে, ইতিবাচক-ভাবে ভাবুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনার বিরুদ্ধে তার কথাগুলো সত্য কিনা। সে ব্যাপারে কোন প্রমাণ আছে কিনা।

না হলে ভিন্নভাবে ভাবুন। সম্ভবত তারা ব্যস্ত বা ক্লান্ত ছিল অথবা তাদের মন খারাপ বা মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। আপনার হয়তো এক্ষেত্রে কিছুই করার ছিল না।

৭) আপনি কেন একাকীত্ব বোধ করেন সে ব্যাপারে জানুন

প্রতিটি মানুষের একাকীত্বের কারণ আলাদা। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করেন, আবার কেউ হয়তো শিকার হয়েছেন বৈষম্যের, কারও পক্ষে অন্যকে বিশ্বাস করা কঠিন, আবার অনেকেই জানেন না নিজের মন মানসিকতার সঙ্গে মিল আছে এমন মানুষ কোথায় পাবেন।

একাকীত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান বের করার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হল, কেন একাকীত্ব অনুভব করছেন সেটা আগে জানা। এক্ষেত্রে আপনার সমাধান যদি কাজ না করে তাহলে অন্য কিছু চেষ্টা করুন।

৮. অপেক্ষা করুন

আমরা জানি যে একাকীত্বের এই অনুভূতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী, তাই এটি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো কাজ করবে। তবে যারা দীর্ঘস্থায়ী একাকীত্বে ভুগছেন তাদের জন্য হয়তো অন্য কোন সমাধান কার্যকর হতে পারে।

যারা একাকীত্বে ভুগছেন তাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন যে একাকীত্বের এই অনুভূতি সময়ের সাথে চলে যায়। তাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা তাদের ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে। জরিপে দেখা গিয়েছে যে একাকীত্বের অনুভূতি সময়ের সাথে অদৃশ্য হয়ে যায়।

৯) প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কাটিয়ে উঠুন

মানুষকে আপনার সাথে কোন কাজ করতে বলা, বা সাহায্য চাওয়া ভাল অভ্যাস। প্রত্যেকেই এটা ভাবতে চান যে তাদের মতো হয়তো অন্যরাও কোন কাজের প্রতি সাড়া পেলে খুশি হয়। কিন্তু তাদের থেকে কখনও কখনও উত্তর ‘না’ আসতে পারে। আপনাকে এই ‘না’ শোনার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে।

কেউ যদি বলেন যে সেদিন তিনি ব্যস্ত আছেন, তাহলে আসলেই হয়তো তিনি ব্যস্ত আছেন। তাই হুট করে এটা ভেবে বসবেন না যে তারা আপনাকে এড়িয়ে চলছেন। অন্যের ‘না’-কে স্বাভাবিকভাবে নিন।

এটা ঠিক যে, সব সমাধান সবার জন্য কাজ করবে না। একাকীত্বে আক্রান্তদের একেকজন একেকভাবে নিজেদের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে যদি একটি সমাধান কাজ না করে তাহলে তারা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেছেন।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy