আত্মসম্মানবোধ একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং একটি সুস্থ ও পরিপূর্ণ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের যোগ্যতা, গুণাবলী ও মূল্যের প্রতি ইতিবাচক ধারণা না থাকলে আত্মবিশ্বাস অর্জন করা কঠিন। যখন একজন ব্যক্তি নিজের প্রতি সম্মান ও বিশ্বাস রাখে, তখন সে জীবনের বিভিন্ন বাধা ও চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। আত্মসম্মানবোধ বৃদ্ধি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া, তবে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপ অনুসরণ করে এই পথে অনেক দূর এগোনো সম্ভব।
১. ইতিবাচক স্ব-কথন ও নেতিবাচক চিন্তাকে প্রতিরোধ: আমাদের মনে প্রতিনিয়ত যে ভাবনাগুলো ঘুরপাক খায়, তা আমাদের আত্মবিশ্বাসের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা বন্ধ করুন। পরিবর্তে, নিজের ভুলগুলোকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুন। যখনই মনে কোনো নেতিবাচক চিন্তা উদয় হবে, তৎক্ষণাৎ সেটিকে চ্যালেঞ্জ করুন এবং তার বিপরীতে ইতিবাচক ও বাস্তবসম্মত যুক্তি উপস্থাপন করুন।
২. ছোট ছোট বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ ও অর্জন: একেবারে বড় লক্ষ্যে ঝাঁপ না দিয়ে, প্রথমে ছোট ছোট এবং অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। প্রতিটি ছোট সাফল্য আপনার আত্মবিশ্বাসকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করবে। যখন আপনি কোনো একটি লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন, তখন নিজেকে তার জন্য পুরস্কৃত করুন। এই ছোট ছোট সাফল্যগুলো আপনার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মাবে যে আপনি অনেক কিছুই করতে সক্ষম এবং এর মাধ্যমেই আপনার আত্মসম্মানবোধ দৃঢ় হবে।
৩. নিজের যত্ন নেওয়া: শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া আত্মসম্মানবোধের জন্য অপরিহার্য। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং শরীরচর্চা করা উচিত। পাশাপাশি, নিজের পছন্দের কাজ অথবা শখের জন্য সময় বের করুন, যা আপনাকে আনন্দ দেয় এবং মানসিক শান্তি এনে দেয় – যেমন বই পড়া, গান শোনা, ছবি আঁকা অথবা প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো। নিজের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে আপনার মস্তিষ্ক এই বার্তা পায় যে আপনি মূল্যবান এবং আপনার প্রয়োজনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. নিজের শক্তি ও গুণাবলীর উপর মনোযোগ: প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু নিজস্ব দক্ষতা ও ভালো গুণাবলী বিদ্যমান। অন্যের সাথে অযথা তুলনা না করে নিজের সেই ইতিবাচক দিকগুলো খুঁজে বের করুন এবং সেগুলোর চর্চা করুন। আপনি কোন কাজে পারদর্শী অথবা কোন গুণের জন্য অন্যরা আপনার প্রশংসা করে, সেদিকে মনোযোগ দিন। নিজের সাফল্য এবং ভালো গুণগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। এটি আপনার আত্মসম্মানবোধকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
আত্মসম্মানবোধ কোনো জন্মগত বৈশিষ্ট্য নয়, এটি অর্জন করা সম্ভব। নিয়মিত এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনি ধীরে ধীরে নিজের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে পারবেন এবং একটি আত্মবিশ্বাসী ও সুখী জীবন যাপন করতে পারবেন।
