মানসিক চাপ, একঘেয়েমি, এমনকি বিশেষ মানসিক অবস্থার কারণে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের কাছে অতিরিক্ত খাওয়া একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আবার অনেকে কেবল খাবারের প্রতি ভালোবাসার কারণে বা কোনো চিন্তা ছাড়াই বেশি খেয়ে ফেলেন। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত খাওয়া স্বাভাবিক হলেও, ঘন ঘন এমনটা হলে তা ওজন বৃদ্ধি এবং হজমের সমস্যাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা ডেকে আনতে পারে। অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে কী করবেন, জেনে নিন কিছু কার্যকরী উপায়।
১. ছোট প্লেট ও বাটি ব্যবহার করুন: মস্তিষ্কের কৌশল অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানোর অন্যতম কার্যকর উপায় হলো সচেতনভাবে খাওয়া। এর জন্য একটি সহজ কৌশল হলো ছোট প্লেট এবং বাটি ব্যবহার করা। এতে আপনার মস্তিষ্কের কাছে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে যে আপনি প্লেট ভর্তি খাবার খাচ্ছেন, যদিও পরিমাণটা আদতে কম। এটি আপনাকে খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কম খেতে সাহায্য করবে।
২. প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান: দীর্ঘ তৃপ্তির রহস্য প্রোটিন এবং ফাইবার হজম হতে বেশি সময় নেয়, ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং ক্ষুধার অনুভূতি কম হয়। তাই আপনার খাদ্যতালিকায় আরও প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করুন। মুরগি বা মাছের মতো চর্বিহীন খাবার, টফু, ডিম এবং ডাল জাতিয় খাবার যোগ করুন। এছাড়াও, শাক-সবজি, গোটা শস্য এবং বাদামের মতো ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারও পাতে রাখুন।
৩. সচেতনতা বাড়ান: আবেগপ্রবণ খাওয়া বন্ধ করুন অনেকে মানসিক চাপ, একঘেয়েমি, দুঃখ, এমনকি আনন্দের সময় আরাম বা স্বস্তির জন্য অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। এই ধরনের অভ্যাস চিহ্নিত করে তা বাদ দিতে হবে। এর বদলে ব্যায়াম, জার্নালিং (ডায়েরি লেখা) বা শখের কোনো সৃজনশীল কাজে সেই সময়টা ব্যয় করতে পারেন। এতে আবেগের বশে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দূর হবে।
৪. খাবারের সঠিক পরিকল্পনা: আগাম প্রস্তুতিই সমাধান একটি সুগঠিত খাদ্যাভ্যাস পরিকল্পনা অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। স্বাস্থ্যকর এবং পরিমিত খাবার আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখুন। অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলতে ফল, দই বা বাদামের মতো পুষ্টিকর স্ন্যাকস হাতের কাছে রাখুন। এটি আপনাকে হুট করে বেশি খেয়ে ফেলা থেকে বাঁচাবে।
৫. ২০ মিনিটের নিয়ম ব্যবহার করুন: মস্তিষ্কের সংকেতের অপেক্ষা আপনার মস্তিষ্ক পেট ভরে গেছে বলে সংকেত দিতে প্রায় ২০ মিনিট সময় নেয়। তাই যদি আপনার মনে হয় যে দ্বিতীয়বার খাবার খাওয়া দরকার, তাহলে প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং দেখুন আপনি এখনও ক্ষুধার্ত কিনা। বেশিরভাগ সময় দেখতে পাবেন যে ততক্ষণে পেট ভরে গেছে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৬. খাবার বাদ দেবেন না: নিয়মিত আহারই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়ার ফলে আপনার ক্ষুধার্ত হওয়ার এবং পরবর্তী খাবারে অতিরিক্ত খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সঠিক সময়ে সুষম খাবার গ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। দিনে তিনবার পরিমিত আহার গ্রহণ করলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম: হরমোন নিয়ন্ত্রণে জরুরি ঘুমের অভাব হলে তা ক্ষুধা-নিয়ন্ত্রক হরমোনগুলিকে (যেমন ঘ্রেলিন ও লেপটিন) ভেঙে দেয়, যার ফলে আরও বেশি খাওয়ার বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য প্রতি রাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম অপরিহার্য।
এই সহজ কৌশলগুলি মেনে চললে অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখবে।