অনিয়মিত জীবনযাপন বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষকে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ফেলছে। কেউ কঠোর ডায়েট মেনে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তো আবার অনেকেই জিমে গিয়ে অতিরিক্ত শরীরচর্চা করছেন। তবে, অতিরিক্ত শরীরচর্চার ফলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকতে পারে। তাই ওজন কমাতে এবার ভরসা রাখতে পারেন প্রাচীন আয়ুর্বেদ উপায়ে। চাইলে খুব সহজে এবং দ্রুত ওজন কমাতে পারবেন এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি মেনে। জেনে নিন করণীয় কী।
আয়ুর্বেদিক উপায়ে ওজন কমানোর ১০টি কার্যকরী কৌশল:
১. দিনের আলোয় খাবার গ্রহণ: লিভারের বন্ধু সাধারণত আমরা দুপুরবেলা ভারী খাবার খেয়ে থাকি। যদি দিনের আলো থাকাকালীন আপনার আহারের কাজটি সম্পন্ন করেন, তাহলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। কারণ আমাদের লিভার মধ্যরাতে খাবারের হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তাই যদি রাতের বেলা অতিরিক্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করা হয়, তাহলে সেটি পাকস্থলীর জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে যায়, ফলে ওজন বাড়তে থাকে। রাতে খাওয়া কমালে অতিরিক্ত ওজনও কমতে শুরু করবে।
২. গরম জল পান: পরিপাক ক্রিয়ার উদ্দীপক পরিপাক ক্রিয়াকে জাগ্রত করতে প্রতিদিন সকালে গরম জল দিয়ে লেবুর রস পান করুন। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহায়ক। এটি হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিনের সঙ্গী স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করাই যথেষ্ট। তাই প্রতিদিন সকালে হাঁটাহাঁটি এবং শরীরচর্চার জন্য অন্তত ৪০-৬০ মিনিট সময় ব্যয় করুন। এটি ক্যালরি পোড়াতে এবং শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে।
৪. মেডিটেশন বা ধ্যান: মানসিক শান্তির চাবিকাঠি সকালে অন্তত ৫-১০ মিনিট বা তারও বেশি সময়ের জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করুন। ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হলো মানসিক চাপ (স্ট্রেস)। মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মনে শান্তি আসে। এই অভ্যাসটি আপনাকে ঠান্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও সহায়তা করবে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমাতে পারে।
৫. ‘৩ বেলা খাবার’ নীতি: মেটাবলিজমের ভারসাম্য কোনো রকম জলখাবার বা স্ন্যাকস বাদ দিয়ে দিনের তিনবেলা মূল খাবার গ্রহণ করুন। খাদ্য আমাদের দেহে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। যখন দেহে পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত খাবার যায়, তখন সেটি ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। তাই একটি নির্দিষ্ট সময়সূচী মেনে চলুন:
- সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে প্রাতঃরাশ গ্রহণ করুন।
- সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে দুপুরের খাবার গ্রহণ করুন।
- সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খান। প্রতিবেলার খাবারের পরিমাণের দিকে নজর রাখুন এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৬. মৌসুমের সঙ্গে মানিয়ে খাওয়া-দাওয়া: প্রকৃতির আশীর্বাদ মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি খেলে দেহ সহজেই পুষ্টিকর উপাদানগুলো পায়, যা প্রাকৃতিকভাবে হজমে সহায়ক।
- গ্রীষ্মকালে: দেহ শীতল ও উজ্জীবিত রাখতে উচ্চ-কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ফল এবং তাজা শাকসবজি খান।
- শরৎ এবং শীতকালে: ঠান্ডা থেকে বাঁচতে শাক-সবজি, বাদাম, ফল, মাংস এবং শস্যদানা খেতে পারেন।
- বসন্তে: প্রচুর পরিমাণে মৌসুমী ফল, নতুন সবুজ শাক খান, যা শীতকালীন আমেজ কাটাতে আপনার শরীরকে উপযুক্ত করে তুলবে। এভাবে বিভিন্ন ঋতুতে মৌসুমী খাবারগুলো গ্রহণ করুন, যা প্রাকৃতিক আয়ুর্বেদ উপায়ে আপনাকে সঠিক কৌশলে খাদ্যাভ্যাস পরিচালনা করতে সহায়তা করবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
৭. ৬ স্বাদ একত্রীকরণ: আয়ুর্বেদিক ভারসাম্য আয়ুর্বেদিক ডায়েট অনুসারে, প্রতিদিনের খাবারে ৬টি প্রধান স্বাদ (মিষ্টি, টক, নোনতা, কড়া/তীব্র – যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আদা; তেঁতো; এবং কষযুক্ত – যেমন আমলকি, মূলা, শশা, ডালিম) একত্রিত করতে হবে। মিষ্টি, টক এবং নোনতা স্বাদের খাদ্যগুলো পুষ্টিকারক এবং প্রোটিন তৈরি করে। এগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রয়োজন তীব্র, তিক্ত এবং কষযুক্ত খাদ্য, যা বিপাকীয় কাজে সহায়ক। তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর।
৮. খাওয়ার পর হাঁটা: হজমের সহায়ক প্রতিবেলা খাবারের পরে হাঁটাহাঁটি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি হজমে সহায়তা করে। দুপুরের খাবার শেষে মাঝারি গতিতে ১০-২০ মিনিট হাঁটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি খাদ্য গ্রহণের পরই শুয়ে থাকতে চান, তাহলে অবশ্যই ১০ মিনিট হেঁটে নিবেন এবং বাম পাশ হয়ে বিশ্রাম নিবেন।
৯. সূর্যের ছন্দে জীবনযাপন: হরমোনের ভারসাম্য আপনার শরীরে একটি বড় হরমোনাল-ভারসাম্য তৈরি করতে সূর্যাস্তের সময় বিছানায় যান এবং সূর্যোদয়ের সঙ্গে জেগে উঠুন। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে আপনার দেহ স্বাভাবিকভাবে ধীরগতির হয়ে যায় এবং শরীর ভার হয়ে যায়। ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে আপনার সব কাজগুলো গুছিয়ে নিন এবং রাত ১০টার আগে বিছানায় যান।
১০. পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম: শরীরকে বিষমুক্ত রাখুন প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে দ্রুত সাহায্য করে। ফলে পরবর্তী দিনের জন্য শরীর পুনরায় অ্যানার্জি পায়। এভাবে আপনার দৈনিক জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলেই ওজন কমবে দ্রুত এবং আপনি সুস্থ থাকবেন।