আধুনিক জীবনে মাংস সংরক্ষণের কথা ভাবলেই আমাদের মাথায় আসে ফ্রিজের কথা। প্রযুক্তির উৎকর্ষ আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু ফ্রিজ আবিষ্কারের আগেও মানুষ বিভিন্ন উদ্ভাবনী উপায়ে মাংস সংরক্ষণ করত। জেনে নিন ফ্রিজিং ছাড়াও আরও কিছু কার্যকরী পদ্ধতি, যা মাংসকে দীর্ঘদিন সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
১. সল্টিং বা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ পদ্ধতি
মাংস টাটকা রাখতে এবং পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন রাখার জন্য এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খাবার লবণ, কিউরিং লবণ, বিভিন্ন মসলা, সোডিয়াম নাইট্রেট ও সোডিয়াম ল্যাক্টেট দিয়ে মাংস ভালো করে মাখিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা রেখে দেওয়া হয়। এরপর ফ্রিজে রাখলে মাংস প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সল্টিং মাংসের মধ্যে অক্সিডেটিভ ও মাইক্রোবিয়াল নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রায় সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
২. ক্যানিং (Canning)
মাংস সংরক্ষণের আরেকটি জনপ্রিয় উপায় হলো ক্যানিং। এটি সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে মাংসকে ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় ডাই করে ঠান্ডা করা হয় এবং তারপর এয়ারটাইট ক্যানে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়াতে আরও বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করা হয়। সঠিকভাবে ক্যানিং করা মাংস প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
৩. স্মোকিং বা ধোঁয়া পদ্ধতি
স্মোকিং বা ধোঁয়ার মাধ্যমে মাংস সংরক্ষণ একটি প্রাচীন পদ্ধতি, যা ব্যবসায়ীরা বহুকাল ধরে ব্যবহার করে আসছেন। এতে মাংসকে তাপের সাহায্যে উৎপন্ন ধোঁয়ার মধ্যে রাখা হয়। কোল্ড স্মোকিংয়ে ৮০-৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রায় ১২-২৪ ঘণ্টা ধরে মাংসকে ধোঁয়ায় পোড়ানো হয়। অন্যদিকে, হট স্মোকিংয়ে প্রায় ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস পোড়ানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় তাপ এবং ধোঁয়ার প্রভাবে মাংসের অনুজীবগুলো মারা যায়, ফলে মাংস দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৪. ড্রাইং বা শুকানো
আগের দিনে যখন ফ্রিজ ছিল না, তখন দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণ করার জন্য মাংস রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হতো। এটি সবচেয়ে সহজ এবং প্রাচীনতম পদ্ধতিগুলোর একটি। মাংসকে পাতলা করে কেটে রোদে শুকিয়ে এর আর্দ্রতা কমিয়ে আনা হয়, যা অনুজীবের বৃদ্ধি রোধ করে।
আধুনিক ফ্রিজিং বনাম ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি
যদিও উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো মাংস সংরক্ষণে অত্যন্ত কার্যকর, বর্তমানে সবচেয়ে সহজ এবং প্রচলিত উপায় হলো ফ্রিজিং। মাংসকে সঠিক উপায়ে কাটা, ধোয়া এবং প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত তা সতেজ থাকে। তবে, এক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর রাখা জরুরি।
ফ্রিজের বাইরেও মাংস সংরক্ষণের এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দেয়। আধুনিক জীবনেও এই পদ্ধতিগুলো জেনে রাখা জরুরি, বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে।