বর্তমানে থাইরয়েডের সমস্যায় বহু নারী-পুরুষ ভুগছেন। যদিও পুরুষদের তুলনায় নারীরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। থাইরয়েড আমাদের শ্বাসনালির সামনের দিকে অবস্থিত একটি গ্রন্থি, যা দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন আমাদের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেমন বিপাকক্রিয়া, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ, বয়ঃসন্ধির লক্ষণ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র ও গর্ভধারণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
থাইরয়েড গ্রন্থি মূলত দুই ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে—টি থ্রি (T3) ও টি ফোর (T4)। থাইরয়েডের সমস্যাও প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত: হাইপারথাইরয়েডিজম (রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া) এবং হাইপোথাইরয়েডিজম (রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়া)। এই উভয় অবস্থাই শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে সাধারণত অতিরিক্ত ক্লান্তি, অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি, শীত শীত ভাব এবং চুল পড়ার মতো কিছু লক্ষণ চোখে পড়ে। তবে জানেন কি, থাইরয়েডে আক্রান্ত হলে নখেও বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া এবং অল্প আঘাতেই নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা থাইরয়েডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। বিশেষত হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে শরীরের অন্যান্য কার্যকলাপের মতো নখের বৃদ্ধিও ধীর হয়ে যায়।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের ঘামের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই থাইরয়েডের সমস্যা হলে শরীরে ঘাম কম হতে পারে। এর পাশাপাশি, নখ, চুল এবং ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, চুল ঝরতে শুরু করে, নখ সহজে ভেঙে যায় এবং ত্বক খসখসে হয়ে ওঠে।
সুতরাং, যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে নখের স্বাভাবিক বৃদ্ধির অভাব লক্ষ্য করেন, সামান্য আঘাতেই নখ ভেঙে যায় এবং একই সাথে চুল পড়া ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা অনুভব করেন, তবে তা থাইরয়েডের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এমতাবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং থাইরয়েড পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
