রান্নাঘরের অতি পরিচিত মশলা জিরা যে কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, এটি যে অসংখ্য শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। পেট ব্যথা, বদহজম থেকে শুরু করে ওজন কমানো পর্যন্ত—এক জিরাতেই মেলে বহু উপকার। আয়রন, কপার, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান ভরপুর জিরায়। এছাড়াও ভিটামিন ই, এ, সি এবং বি-কমপ্লেক্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনও এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক জিরার কিছু অসামান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।
একাধিক শারীরিক সমস্যায় জিরার কামাল
পেটের সমস্যা ও হজম: জিরা পেট এবং হজম প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী। পেট ব্যথা, বদহজম, ডায়রিয়া এবং মর্নিং সিকনেসের মতো সমস্যায় জিরা তাৎক্ষণিক উপশম দেয়। এক গ্লাস জলে এক চা চামচ ভাজা জিরার গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়। ভাজা জিরা কালো মরিচ ও বাটার মিল্কের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রে গ্যাসের কারণে পেটে ব্যথা হলে এক গ্লাস জলে এক চিমটি ভাজা জিরার গুঁড়ো, সামান্য আদা, নুন এবং আধা চা চামচ মৌরি মিশিয়ে সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে ছেঁকে পান করলে দারুণ আরাম মেলে।
পিরিয়ড ও কোষ্ঠকাঠিন্য: পিরিয়ডের ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায় এই নির্যাস উপশম দিতে পারে। ছোট বাচ্চাদের পেট ব্যথায় গরম জলে জিরা সেদ্ধ করে ঠান্ডা করে পান করালে দ্রুত সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।
রক্তাল্পতা দূরীকরণ: অ্যানিমিয়া, বিশেষ করে মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা থাকলে খাবারে নিয়মিত জিরা যোগ করুন। এতে থাকা আয়রন রক্তাল্পতা দূর করার পাশাপাশি ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কমায়।
এনার্জি বৃদ্ধি ও ওজন কমানো
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী: আয়রন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় জিরা গর্ভবতী এবং সদ্য মা হওয়া মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী। এক গ্লাস উষ্ণ দুধে এক চা চামচ জিরা এবং মধু মিশিয়ে পান করলে শরীরে শক্তি পাওয়া যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ ও কোলেস্টেরল কমানো: জিরা খেলে ওজনও কমে। এটি শরীর থেকে চর্বি ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। দইয়ের সঙ্গে জিরা মিশিয়ে খেলে মেদ ঝরাতে উপকার মেলে।
হাড়ের স্বাস্থ্য: জিরায় উপস্থিত ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করে। এতে থাকা ভিটামিন A এবং B12 অস্টিওপরোসিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
ঘুম ও স্মৃতিশক্তি: যাদের ঘুম হয় না, তাদের জন্যও জিরা উপকারী। একটি পাকা কলা মাখিয়ে তাতে ভাজা জিরা মিশিয়ে খেলে ভালো ঘুম আসে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও জিরাকে উপকারী বলে মনে করা হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উপস্থিতির কারণে এটি ঘটে। তাই প্রতিদিন আধা চা চামচ জিরা চিবিয়ে খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস: সুগার রোগীদের জন্যও জিরা উপকারী বলে মনে করা হয়। তবে, মনে রাখবেন, যেকোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় সবার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।