খাওয়ার আগে বা পরে বুক জ্বালাপোড়া, পেট ব্যথা অথবা বমি বমি ভাব—গ্যাস্ট্রিকের এই পরিচিত সমস্যায় কমবেশি সকলেই ভোগেন। ভেজাল মেশানো খাবারও ছোট-বড় সকলের পেটের গোলযোগের কারণ হতে পারে। এই সমস্যা মূলত আমাদের পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যাবলীর ব্যাঘাতের ফল।
গ্যাস্ট্রিকের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন করেন। সাময়িক আরামের জন্য এসব ওষুধ কার্যকর মনে হলেও, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
গবেষকদের সতর্কবার্তা, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস (পিপিআইএস) জাতীয় ওষুধ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
নিউইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক অধ্যাপক প্রদীপ অরোরা ও তার গবেষক দল ৭১ হাজার ৫১৬ জন রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এদের মধ্যে ২৪ হাজার ১৪৯ জন দীর্ঘমেয়াদী কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। এই রোগীদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই গ্যাস্ট্রিকের উপশম পেতে পিপিআইএস জাতীয় ওষুধ সেবন করতেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পিপিআই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করেন, তাদের ১০ শতাংশের কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ে এবং ৭৬ শতাংশের ক্ষেত্রে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অধ্যাপক প্রদীপ অরোরা বলেন, “রোগীদের একটি বড় অংশ পিপিআইএস জাতীয় ওষুধ সেবন করেন। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের এ জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত।”
তবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ওষুধই একমাত্র সমাধান নয়। কিছু নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
গ্যাস্ট্রিকের প্রতিকারে যা করণীয়:
১. নিয়মিত জীবনযাপন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করুন। এতে পেটে গ্যাস জমবে না।
২. টক দই গ্রহণ: দই অথবা টক দইয়ে প্রোবায়োটিক উপাদান থাকে যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমিয়ে রাখে।
৩. সঠিক খাদ্য উপাদান নির্বাচন: শসা, আদা, লবঙ্গের মতো খাবার খেলে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৪. ধূমপান পরিহার: ধূমপান গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়াতে পারে, তাই এটি থেকে বিরত থাকুন।
৫. নিয়মিত অল্প পরিমাণে আহার ও জল পান: দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে না থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত জল পান করুন।
৬. তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার বর্জন: অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মসলাযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বৃদ্ধি করে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৮. মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখুন: নিজেকে প্রফুল্ল ও হাসিখুশি রাখলে মানসিক চাপ কমে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ওষুধ সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। সুস্থ জীবনযাপনই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তির সর্বোত্তম উপায়।