অনেকের বাড়ির আঙিনায় বা ছাদে শোভা পায় তুলসী গাছ। এই ঔষধি গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আয়ুর্বেদে তুলসী পাতার ব্যবহার বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। চুল ও ত্বকের চিকিৎসা থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পর্যন্ত, তুলসী পাতা নানাভাবে আমাদের শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ভরতের বৈদ্যনাথের ক্লিনিক্যাল অপারেশনস অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন ম্যানেজার ডা. আশুতোষ গৌতমের মতে, তুলসীর তেল আমাদের শ্বাসযন্ত্রের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, যা মানসিক চাপ কমাতে, স্নায়ুকে শান্ত রাখতে এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়াও, তুলসীতে লিনোলেইক অ্যাসিড থাকায় এটি ত্বকের জন্যও দারুণ উপকারী।
তবে শুধু ত্বক বা রোগ প্রতিরোধ নয়, তুলসী পাতা ওজন কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ডা. শিখা শর্মা তাঁর ‘১০১ টি ওজন কমানোর টিপস’ বইতে উল্লেখ করেছেন, সকালে ৫-৬টি তুলসী পাতা খেলে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়।
অনেকেই তুলসী পাতা সরাসরি খেতে পছন্দ করেন না। তবে এর উপকারিতা পেতে বিভিন্নভাবে এটি গ্রহণ করা যেতে পারে। রাতে জলে কয়েকটা তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই জল পান করা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। এছাড়াও, তুলসী পাতা ও সামান্য আদা ফুটিয়ে তুলসী চা তৈরি করে দিনের শুরুটা করা যেতে পারে।
সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খেলে কীভাবে ওজন হ্রাস করা সম্ভব, তা জেনে নেওয়া যাক:
বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি করে: তুলসী পাতা আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়ার হার বাড়াতে সাহায্য করে। বিপাক হারের মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় সারাদিনে আমাদের শরীর কত ক্যালোরি খরচ করবে। তুলসী পাতা বিপাক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে, ফলে শরীর দ্রুত ক্যালোরি বার্ন করতে সক্ষম হয়।
বিষাক্ত পদার্থ দূর করে: তুলসী পাতা বা তুলসী চা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটি রক্তকে পরিশুদ্ধ করে এবং শরীরের জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীর গত দিনের দূষণ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন দিনের জন্য প্রস্তুত হয়।
হজমক্ষমতা উন্নত করে: আয়ুর্বেদ অনুসারে, আদা ও তুলসী আমাদের পাচনতন্ত্রের জন্য দারুণ কাজ করে। একটি সুস্থ পাচনতন্ত্র ওজন কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। হজমের সমস্যা থাকলে শরীরে সঠিকভাবে পুষ্টি শোষিত হতে পারে না এবং বর্জ্য নিষ্কাশন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে বিপাক হার কমে যায় এবং ক্যালোরি সঠিকভাবে বার্ন হতে পারে না। ডা. শিখা তাঁর বইতে আরও লিখেছেন, সকালে খালি পেটে ১৫-২০টি তুলসী পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হতে পারে!
সুতরাং, ওজন কমাতে চাইলে সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস শুরু করতে পারেন। এটি কেবল ওজন কমাতেই সাহায্য করবে না, বরং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করবে।