পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেমন আলাদা, তেমনই একজন মায়ের সব সন্তানও স্বতন্ত্র স্বভাবের অধিকারী হয়। তবে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, পরিবারের মাঝের সন্তানটি বা সন্তানরা তাদের ভাই-বোনদের তুলনায় বেশি বুদ্ধিমান হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরাও এই ধারণাকে সমর্থন করছেন। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যদিও মাঝের সন্তানরা অনেক সময় অন্যদের তুলনায় কিছুটা কম মনোযোগ পেয়ে থাকে, তবে তারা পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে অন্যদের চেয়ে বেশি সফল হওয়ার প্রবণতা দেখায়। এর পেছনে কিছু বাস্তব কারণও রয়েছে। আসুন, সেই কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক:
তারা জন্মগতভাবে কূটনীতিক:
পরিবারের বড় সন্তান স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বেশি আদর-ভালোবাসা পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, ছোট সন্তান থাকে সকলের স্নেহের কেন্দ্রবিন্দু, সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তবে এই দুইয়ের মাঝে থাকা সন্তানটি প্রায়শই অন্যদের নজরের বাইরে থেকে যায়। ফলস্বরূপ, তারা এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ধৈর্য এবং কূটনীতির চর্চা করতে শেখে। এটি আসলে টিকে থাকার একটি সহজাত গুণ। এভাবেই তারা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে।
তারা দক্ষ টিম প্লেয়ার:
বড় সন্তানরা সাধারণত সবকিছু প্রথম পায়। অন্তত তাদের ছোট ভাই বা বোনের জন্ম হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কোনো অভাব থাকে না। ছোট সন্তান আসার পর আবারও তাকে ঘিরে পরিবারের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়। তবে বড় সন্তানকে তার প্রাপ্য আদর ও আন্তরিকতার অনেকটাই দেওয়া হয়ে থাকে। মাঝের সন্তানের ক্ষেত্রে অনেক সময় বড়দের মনোযোগ কিছুটা কম থাকে। তাই তারা এই পরিস্থিতি মেনে নিয়ে অন্যান্য ভাই-বোনদের সঙ্গে একযোগে সময় কাটাতে শেখে। এই কারণে তারা দলবদ্ধভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ হয়ে ওঠে।
তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিদ্যমান:
বড় সন্তানের তুলনায় মাঝের সন্তানরা ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতা লাভ করে। ফলে একটা সময় আসে যখন কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাদের উপর আস্থা রাখে। নেতৃত্বের গুণাবলী মাঝের সন্তানদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
তারা সহজে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে:
বাড়িতে অন্যদের তুলনায় কম মনোযোগ পাওয়ায় মাঝের সন্তানরা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির বাইরের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার দিকে বেশি আগ্রহী হয়। এভাবে অন্যদের সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার এবং বন্ধুত্ব তৈরি করার ক্ষেত্রে তারা অন্যদের চেয়ে বেশি স্মার্ট হয়। এর ফলে তারা সহজেই দারুণ সব বন্ধুও খুঁজে পায়।
তাদের মধ্যে অহংবোধ কম থাকে:
বড় এবং ছোট সন্তানের তুলনায় মাঝের সন্তানদের মধ্যে অহংবোধের সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। এর মূল কারণ হলো, তারা অন্যদের মতো অতিরিক্ত যত্ন বা মনোযোগ পায় না। ফলে অনেক কিছুই তাদের কাছে সহনীয় হয়ে ওঠে। তারা সহজে ইগো-সংক্রান্ত জটিলতায় জড়িয়ে পড়ে না। এই কারণেও তারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচিত হয়।
সুতরাং, যদি আপনার পরিবারে মাঝের কোনো সন্তান থাকে, তবে তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং বুদ্ধিমত্তাকে স্বীকৃতি দিন। হয়তো তিনিই একদিন আপনার পরিবারের সবচেয়ে সফল সদস্য হিসেবে পরিচিত হবেন!