ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখার ফলে ত্বকের যেসব ক্ষতি হতে পারে?

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে তরূণ-তরুণীরা মাখেন ফর্সা হওয়ার ক্রিম। কিন্তু এ ক্রিমে আসলেই কী কোনো উপকার হচ্ছে? নাকি অজান্তেই ডেকে আনছেন বিপদ?

ছোট থেকে কালো রং ফর্সা করার জন্য ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখতে শুরু করে অনেক কিশোর-কিশোরী। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখার ফলে ত্বক শুকিয়ে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর আনন্দবাজারকে জানান, ফর্সা হওয়ার জন্য যে ক্রিম মাখা হয় সেটার মাধ্যমে শুরুতে কিছুটা পরিষ্কার লাগলেও বার বার মুখে লাগানোর ফলে কালচে ছোপ পড়ার পাশাপাশি মুখে গলায় হাতে বিভিন্ন রকমের অ্যালার্জি, র‍্যাশ, ব্রন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুকিয়ে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফর্সা হওয়ার ক্রিমে মার্কারি, লেড, স্টেরয়েড, নানান প্রিজার্ভেটিভসহ অজস্র রাসায়ানিক থাকে, যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। তাই ত্বক বিশেষজ্ঞরা প্রায় সময় এই ক্রিম মাখতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি, বরং এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। ২০১৯ সালে ভারতে ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবসা ছিল ৩০০০ কোটি টাকার।

বিশ্বের বৃহত্তম বিপণন গবেষণা জার্নাল ‘রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস’-এ প্রকাশিত গবেষণায় জানা গেছে, ২০২৩ সালে ভারতে ফেয়ারনেস ক্রিমের ব্যবসা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০০০ কোটি টাকায়।

এ বিষয়ে সন্দীপন জানান, প্রত্যেক মানুষ আলাদা আলাদা ত্বকের রং নিয়ে জন্মায়। পৃথিবীর কোনও ক্রিম বা লোশনের সাধ্য নেই সেই রংকে ফর্সা করে দেওয়ার। প্রত্যেক মানুষ যে রং নিয়ে জন্মেছে, সেই রং ফর্সা করা যায় না। তবে ত্বকের রং সূর্যের অতিবেগনি রশ্মির প্রভাবে কালচে হয়ে যায়। ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখলে কালো হওয়া আটকানো যায় না।

ফর্সা হওয়ার ক্রিম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বিজনেজ সিক্রেটের নাম করে সব কোম্পানিই ফেয়ারনেস ক্রিমের উপাদান সম্পর্কে ক্রেতাদের অন্ধকারে রাখে। আদতে এগুলির মূল উপাদান হাইড্রোক্যুইনোন, হাইড্রক্সিইথাইল ইউরিয়া, ফেনক্সিইথাইল, ট্রেটিনয়েন, স্টেরয়েড এবং মার্কারি। এই রাসায়ানিকগুলি দীর্ঘ দিন ব্যবহার করলে ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি হয়। নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেকের ত্বক ভয়ানক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

ব্যবহারকারী যখন টের পান, তখন তা আর সারিয়ে তোলার উপায় থাকে না। লাগাতার ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখলে মুখ ও গলার ত্বকের স্থায়ী পিগমেন্টেশন হয়ে যায়, সব মুখ, গলাজুড়ে কালচে ছোপ পড়ে। চোখ এবং চুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যারা নিয়মিত ফর্সা হওয়ার ক্রিম মাখেন, তাদের চোখে জ্বালা থেকে শুরু করে নানা রকম অসুবিধে হতে পারে।

ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি সফট টিস্যুরও সমস্যা হয়। এমনকি ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে যায়। কালো হওয়া আটকাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন লাগানো সব থেকে ভাল সমাধান। সুস্থ সুন্দর ঝকঝকে ত্বকের জন্য পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়াও জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy