দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার অভ্যাস এখন সবার মধ্যেই তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কর্মজীবীরা বাধ্য হয়েই বসে কাজ করেন। শুধু অফিসের কারণেই নয়, অনেক তরুণরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহার করেন। আবার কেউ কেই বসে দেখছেন টিভি। সব মিলিয়ে একটানা বা দিনের বেশিরভাগ সময় বসে থাকার ফলে নিজের অজান্তেই নানা রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন অনেকেই।
জানলে অবাক হবেন, মাত্রাতিরিক্ত বসে থাকার কারণে আয়ু কমে যেতে পারে। এ ছাড়াও আক্রান্ত হতে পারেন হৃদরোগ, ডায়াবেটিসহ স্থূলতায়। চলুনতবে জেনে নেওয়া যাক মাত্রাতিরিক্ত বসে থাকার প্রভাব কীভাবে শরীরে পড়ে-
হৃদরোগ
সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ড্রাইভার যারা সারাদিন সে গাড়ি চালান; আর গার্ড যারা সারাদিন দাঁড়িয়ে পাহারা দেন- এই দুই দলের মানুষের মধ্যে ড্রাইভারের হুদরোগের ঝুঁকি বেশি ছিল গার্ডের তুলনায়। গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে, বসে থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
আয়ু কমে যাওয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে আয়ু অনেকখানি কমে যায়। এর মূল কারণ হলো কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হওয়া। এটা ঠিক নয় যে, ওয়ার্ক আউট বা এক্সারসাইজ করলে আয়ু বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে শরীর সুস্থ রাখতে অনেকখানি সাহায্য করে শরীরচর্চা। মনে রাখবেন, মাত্রাতিরিক্ত বসে থাকা মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।
ডিমেনশিয়া
গবেষণায় দেখা গেছে, টানা বসে থাকার কারণে অনেকেরই ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়ার রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস এসব রোরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বারবার বসা থেকে উঠে একটু হাঁটাচলা করুন।
শরীরে ঝিমিয়ে পড়বে
বেশিরভাগ সময় বসে থাকার কারণে আপনার শরীরের শক্তিও কমতে শুরু করবে। আপনি যতই মনে করুন না কেন যে নিয়মিত ওয়ার্কআউট করব, সেটি হবে না। আপনি যদি সপ্তাহে ৭ ঘণ্টা শরীরচর্চা করেন; তার বদলে যদি ৭ ঘণ্টা বসেই কাটিয়ে দেন তাহলে কোনো কাজ হবে না। তাই বসে থাকার ঘণ্টা হিসাব করে ওয়ার্কআউটের সময়ও বাড়াতে হবে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বর্তমানে অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে সবার মধ্যেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সঙ্গে একটানা বসে থাকার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এর কারণ হলো শরীর থেকে কোনো ক্যালরি বা ফ্যাট না ঝরানো। যে কারণে ইনসুলিন হরমোন ক্ষরণ কম হয় ও রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যায়।
ডিভিটি (ডিপ ভেইন থ্রোম্বোসিস)
অতিরিক্ত বসে থাকলে হাঁটুর জয়েন্টে ডিভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর লক্ষণ প্রধানত হাঁটু ফুলে লাল হয়ে যাওয়া ও ব্যথা করা। এক্ষেত্রে জয়েন্টের স্থানে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। তাই অবশ্যই এটি এড়ানোর জন্য টানা না বসে থেকে উঠে হাটাচলার অভ্যাস করতে হবে।
ওজন বেড়ে যাওয়া
আপনার যদি টানা বসে থাকেন; তাহলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও শরীরের নিম্নাঙ্গে মেদ জমে। এজন্য অতিরিক্ত ওজন যাতে না বেড়ে যায়, এজন্য নিয়মিত ওয়ার্ক আউট করুন। পাশাপাশি বসে থাকার পরিমাণ কমাতে হবে।
মাত্রাতিরিক্ত বসে কাজ করার কারণে অনেকেরই ঠিকমতো ঘুম হয় না। এক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে দুশ্চিন্তার মাত্রা বেড়ে যায়। আবার কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার কারণে মন খুলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোও হয় না- সব মিলিয়ে দশ্চিন্তা বেড়ে যায়।
পিঠে ব্যথা
টানা বসে থাকায় আপনার মেরুদণ্ড, পিঠ ও ঘাড়ে চাপ পড়ে। তাই পিঠ ও কোমরে ব্যথা শুরু হয়। এক্ষেত্রে যতো আরামদায়ক চেয়ারই বেছে নেওয়া হোক না কেন, দিন শেষে এই ব্যথা থাকবেই। তাই চেষ্টা করুন টানা বসে না থেকে আধা ঘণ্টা পরপর উঠে হাঁটাচলা করা।
শিরা ফুলে উঠা
অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে শিরায় রক্ত জমে ফুলে যায়। এক্ষেত্রে অনেকবেশি চাপ পড়লে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এমন কোনো উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে খুব দ্রুত।
অস্টিওপোরেসিস
একটানা বসে কাজ করার কারণে অস্টিওপোরেসিস বা অস্থি দুর্বল হয়ে যায়। তবে এ সমস্যাটি কাটাতে এখন থেকেই সচেতন হতে পারে। যাতে বয়স বাড়লে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি
একটানা বসে থাকায় কোলন ক্যান্সার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে বাড়িয়ে দেয় স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি।
যেভাবে দাঁড়াতে পারেন
টানা বসে না থেকে কাজের মাঝখানে বিরতি নিয়ে একটু হাঁটুন ও পুরো শরীরকে প্রসারিত করার চেষ্টা করুন। হাত পা নাড়ানো ও কোমড় বাকিয়ে নিচু হয়ে একটু এক্সারসাইজ করুন।
নিজের অফিসের ডেস্ক ছেড়ে অন্য কলিগদের ডেস্কে ঘুরে কথা বলুন। কিংবা দাঁড়িয়ে চা বা কফি পান করুন। এতে করে অনেকটা রিলাক্সেশন হবে শরীরের। এভাবে প্রতিদিন চেষ্টা করুন আধা ঘণ্টা করে ব্রেক নিতে।