থাইরয়েডের সমস্যা এখন অনেকের জীবনেই এক সাধারণ চিত্রে পরিণত হয়েছে। একবার এটি শরীরে বাসা বাঁধলে জীবন যেন প্রায় অস্থির হয়ে ওঠে। খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকা, অসময়ে চুল পড়ে যাওয়া, ত্বকের জৌলুস হারিয়ে যাওয়া—এই সবকিছুর পেছনেই লুকিয়ে থাকতে পারে থাইরয়েডের সমস্যা। আর সময় থাকতে থাইরয়েডের চিকিৎসা না করালে, এটি বড় আকার ধারণ করতে পারে। থাইরয়েডের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হলেও, সামান্য খেয়াল রাখলেই এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।
থাইরয়েড কী ও এর প্রকারভেদ:
থাইরয়েড গ্রন্থিটি প্রত্যেকের গলায় শ্বাসনালীর সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে দুই প্রকার হরমোন— টি-থ্রি (T3) ও টি-ফোর (T4) —ক্ষরিত হয়। আমাদের শরীরের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোনগুলো থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা প্রধানত দুই ধরনের হয়:
হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism): এই অবস্থায় রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism): এই অবস্থায় রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায়।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি:
থাইরয়েড গ্রন্থির আল্ট্রাসাউন্ড, অ্যান্টি টিপিও অ্যান্টিবডি, থাইরয়েড স্টিমিউলেটিং হরমোন (TSH) এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষায় থাইরয়েড ধরা পড়লেই, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করা উচিত।
থাইরয়েডের ওষুধ সেবনের সঠিক নিয়ম:
যদি চিকিৎসক থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন, তবে সঠিক সময় জেনে ওষুধ খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, সকালে খালি পেটে থাইরয়েডের ওষুধ খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। খাওয়ার পরে বা খাবারের সঙ্গে এই ওষুধ খেলে শরীরে সঠিক ভাবে তা শোষিত হয় না। ফলে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে, যদি একজন ব্যক্তি সকালে খালি পেটে থাইরক্সিনের সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেন, তাহলে রোগীর শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে দুটি ডোজে ভাগ করে ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, তবে অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
ওষুধ সেবনের গুরুত্বপূর্ণ নিয়মাবলী:
থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার সময় বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত:
সময়নিষ্ঠা: এই ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাঁধাধরা সময় মেনে চলাই ভালো। সকালের ৮টার ওষুধ যেন রোজ ৮টাতেই খাওয়া হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। সকালে ওষুধ খেতে যদি কোনো দিন ভুলে যান, তাহলে দুপুরের খাবারের দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর ওষুধ খেতে পারেন।
খাবার বর্জন: এই ওষুধ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে কিছু না খাওয়াই ভালো। এমনকি চা বা কফিও নয়!
ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট: থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম রয়েছে এমন কোনো খাবার খাবেন না। এই ওষুধ খাওয়ার সময় অন্য কোনো সাপ্লিমেন্ট যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম বা ভিটামিনের ওষুধ ভুলেও খাবেন না। যদি প্রয়োজন হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্য সময়ে গ্রহণ করুন।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ওষুধটি সারা জীবন ধরে খেয়ে যেতে হয়। তাই পরীক্ষায় হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হলেও ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। মাত্রা বেশি কমে বা বেড়ে গেলে ওষুধের ডোজ ঠিক করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।