ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ওষুধ সেবনের পরও অনেক সময় হঠাৎ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কমে যেতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া যেমন বিপজ্জনক, তেমনই মাত্রাতিরিক্ত কমে যাওয়াও (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হৃদরোগসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে, এমনকি রোগী কোমায়ও চলে যেতে পারেন। তাই রক্তে শর্করার মাত্রার দিকে নিয়মিত খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া কী এবং এর লক্ষণসমূহ
রক্তে শর্করার পরিমাণ ৭০ একক বা তার নিচে নেমে গেলেই সতর্ক হতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেছে কিনা, তা জানার জন্য কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে:
হাত-পা কাঁপা
শীত শীত অনুভূতি
হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যাওয়া
খিদে পাওয়া
বমি বমি ভাব
শ্বাসকষ্ট হওয়া
দুঃস্বপ্ন দেখা
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
রক্তে শর্করা কমে গেলে দ্রুত যা করবেন: ‘১৫-১৫’ নিয়ম
‘আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন’ এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছে, যার নাম ‘১৫-১৫’ নিয়ম।
যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ৭০ এককের নিচে নেমে যায়, তাহলে ১৫ গ্রাম মিষ্টি (যেমন: মধু, চকলেট, চিনির শরবত ইত্যাদি) কিছু খান। এমন কিছু খেতে হবে যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেবে।
মিষ্টি খাওয়ার পর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর আবারও রক্তে শর্করার মাত্রা মাপুন।
যদি সংখ্যাটি ৭০ এককের উপরে ওঠে, তাহলে তা ভালো লক্ষণ। আর যদি না ওঠে, তাহলে আবারও ১৫ গ্রাম মিষ্টি খেয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে তবেই পরীক্ষা করুন।
যখন ‘১৫-১৫’ নিয়ম যথেষ্ট নয়
তবে, সবসময় যে এই পদ্ধতি ফলপ্রসূ হবে তা ঠিক নয়। যদি ‘১৫-১৫’ নিয়ম অনুসরণ করার পরও রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক না হয় বা রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে দেরি না করে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
উপসংহার:
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রক্তে শর্করার মাত্রার ওঠানামা সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষা, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি মোকাবিলা করা সম্ভব।