গলা বসে যাওয়া কি কেবলই ঠান্ডা লাগা? হতে পারে মারাত্মক রোগের লক্ষণ!

গলার স্বরের পরিবর্তন বা গলা বসে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যান, বিশেষ করে শীতকালে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। আমাদের স্বরযন্ত্রের গঠন ও কার্যপ্রণালী বেশ জটিল। ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্রের মাঝ বরাবর থাকে ভোকাল কর্ড, যার দুটি অংশ। ভোকাল কর্ডের সমন্বিত নাড়াচাড়া এবং জিহ্বা, মুখের মাংসপেশি, খাদ্যনালির অংশবিশেষসহ আরও অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সহযোগিতায় আমরা কথা বলি।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন।

সাধারণ কারণ: ল্যারিনজাইটিস
ল্যারিংস আর ভোকাল কর্ডের গুরুত্বই সবচেয়ে বেশি। অনেক উঁচু গলায় কথা বললে গলার স্বর ভেঙে যেতে পারে, আবার ঠান্ডায়ও গলার স্বর পরিবর্তিত হয়। এ শীতে স্বরযন্ত্রের প্রদাহ বা ল্যারিনজাইটিস-এর কারণেই গলার স্বর বসে যাওয়ার সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এর সঙ্গে কফ, ঠান্ডা বা গলাব্যথা থাকতে পারে।

ডা. শারমিন জানান, ল্যারিনজাইটিস হলে খুব একটা ভয়ের কারণ নেই। এর প্রধান চিকিৎসা হলো কথা না বলা, যার ফলে স্বরযন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং তাড়াতাড়ি আরাম পাওয়া যায়। ঠান্ডা, ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, হালকা গরম জল দিয়ে গড়গড়া করা, আদা, লবঙ্গ ইত্যাদি খেলেও কণ্ঠস্বর ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আসে। এছাড়াও, চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে।

পেশাগত কারণে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা (ক্রনিক ল্যারিনজাইটিস)
যারা পেশাগত বা ব্যক্তিগত কারণে বেশি কথা বলেন, যেমন— শিক্ষক, চিকিৎসক, গায়ক, ক্যানভাসার, এদের ক্ষেত্রেও গলার স্বরের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ক্রমাগত কথা বলার কারণে স্বরযন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়, যাকে ক্রনিক ল্যারিনজাইটিস বলা হয়। কখনও কখনও ভোকাল কর্ডে পলিপ, নডিউল বা টিউমার হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো ব্যথা বা অসুবিধা থাকে না, শুধু গলার স্বর বসে যায়, যা সময়ের সঙ্গে বেড়ে যেতে পারে, সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হতে পারে।

মারাত্মক কারণ ও কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
মারাত্মক কিছু কারণেও গলার স্বরের পরিবর্তন হতে পারে। বিশেষ করে স্বরযন্ত্র বা শ্বাসনালির ক্যানসারজাতীয় সমস্যা হলেও গলার স্বর বসে যায়। তাই, কারও ক্ষেত্রে যদি গলার স্বরের সমস্যা চার থেকে ছয় সপ্তাহের বেশি হয়ে যায়, সঙ্গে কাশি, কফ বা গলা দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যা থাকে, ওজন কমার লক্ষণ দেখা দেয়, শ্বাসকষ্ট থাকে বা ধূমপানের ইতিহাস থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

অন্যান্য কিছু কারণও গলার স্বরের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে:

থাইরয়েড হরমোনের অভাব বা হাইপোথাইরয়েডিজম রোগে গলার স্বর ফ্যাসফ্যাসে হতে পারে।
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা থাকলেও গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডের যে নার্ভ, রিকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভ নামে পরিচিত, সেই নার্ভ বিকল হলেও গলার স্বর একদম বসে যেতে পারে বা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
করণীয় ও সতর্কতা
গলা ভেঙে যাওয়ার সমস্যাকে আমরা অধিকাংশ সময় খুব একটা পাত্তা দেই না, কিন্তু এর পেছনে মারাত্মক কোনো কারণ থাকাও অসম্ভব নয়। তাই প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কারণ উদ্ঘাটন করে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।

এছাড়াও স্বরযন্ত্রের যত্ন নেওয়া দরকার:

উঁচু গলায় কথা কম বলা।
ধূমপান বা মদ্যপান না করা।
পান-সুপারি বা জর্দা কম খাওয়া।
অতিরিক্ত গরম বা ঝাল খাবার না খাওয়া।
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ঠান্ডা বা ধুলাবালি থেকে বাঁচতে, এবং কোভিড ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy