গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ করছেন? সুস্থ ও টেনশনমুক্ত থাকতে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন

আজকালকার মেয়েরা প্রেগন্যান্সিটাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চান৷ তা ছাড়া, যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা স্রেফ গর্ভাবস্থার কারণে তো আর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে থাকেন না, বন্ধ থাকে না বাইরে যাওয়াও৷ সেই সময় কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই সুস্থ ও টেনশনমুক্ত থাকবেন৷

কোঠারি মেডিক্যাল সেন্টার ও ভাগীরথী নেওটিয়া উওম্যান অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত গাইনিকোলজিস্ট-অবস্টেট্রিশিয়ান ডা. গৌরী কুমরা ও প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রঞ্জিত চক্রবর্তী একযোগে বলছেন, প্রথম তিনটে মাসে, পোশাকি ভাষায় যাকে ‘ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার’ বলা হয়, একটু সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। ‘‘সম্ভব হলে এই সময়টা ট্র্যাভেল করবেন না, কারণ গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে,’’ বলছেন ডা. কুমরা। ‘‘সমস্যা হচ্ছে, কোন কোন মহিলার গর্ভপাত হবে, বা সময়ের আগে প্রসব হতে পারে সেটা আগে থেকে সাধারণত বোঝা যায় না। তাই সকলের ক্ষেত্রেই সাবধানতা অবলম্বন করতে বলি,’’ বলছেন ডা. চক্রবর্তী। অনেক মেয়ের শরীরও এই সময়টায় ভালো যায় না, বমি হয়, ক্লান্তি গ্রাস করে। তবে আপনার ডাক্তারের যদি কোনও আপত্তি না থাকে, তা হলে এর পর ভ্রমণ করতেই পারেন৷

এক শহর থেকে অন্য শহর বা লম্বা বিমানযাত্রা করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় কয়েকটি বিষয় বিশেষ করে খেয়াল রাখবেন। ডা. কুমরা বলছেন, ‘‘মেয়েরা সাধারণত বাথরুম যাওয়া এড়ানোর জন্য লম্বা সফরে যাওয়ার আগে থেকেই জল খাওয়া একেবারে কমিয়ে দেন। গর্ভাবস্থায় তেমনটা ভুলেও করবেন না। জল খান, আর নিয়মিত প্রস্রাব করে ব্লাডার খালি করে রাখুন। না হলে কিন্তু মাথাব্যথা বা বমির মতো সমস্যা হতে পারে।’’

কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও ঠিক যে পাবলিক টয়লেট, এমনকী বিলাসবহুল ট্রেন অথবা বিমানের টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠতে পারে, বিশেষত এদেশে। এখন একটা সুবিধে আছে, ডিসপোজ়েবল টয়লেট সিট কভার পাওয়া যায়, তেমন কয়েকটি হাতের কাছে রাখতে পারেন। একান্তই কিছু না থাকলে ক্যারি করুন স্যানিটাইজ়ার। টয়লেট সিট ভালো করে মুছে টিস্যু পেপার বিছিয়ে তবেই তার উপর বসুন। তবে ডা. কুমরা বলছেন, ‘‘শুধু ট্রেন, প্লেন বা পাবলিক টয়লেট নয়, ফাইভ স্টার হোটেলের টয়লেট সিট থেকেও কিন্তু ইনফেকশন ছড়াতে পারে!’’ তাই বাড়ির বাইরে যে কোনও জায়গায় বাথরুম ব্যবহার করুন সতর্ক হয়ে। সাবধানতা হিসেবে স্যানিটাইজ়ার রাখাটা মাস্ট।

লম্বা সময় সফর করলে ব্লাড ক্লট বা ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস (DVT) হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জল খান, শরীর কোনও কারণে ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে আরও নানা সমস্যা দেখে দেবে। সেই সঙ্গে হালকা খাবার খাবেন, আর অ্যালকোহলের ক্ষেত্রে সপ্তাহে এক গ্লাস ওয়াইনের বেশি পান করার অনুমতি দেওয়া হয় না। বার বার চা-কফি বা নরম পানীয় খেয়ে গলা ভেজানো থেকেও বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, কোনও পানীয়ই জলের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না। আর মাঝে মাঝেই সিট থেকে উঠে হাঁটাচলা করে নেবেন৷ এক জায়গায় টানা বসে থাকবেন না৷

সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে গাড়িতে চেপে কোথাও গেলে মাঝে মাঝেই নিজের বসার ভঙ্গি বদলান। কিছু সময় পর পর, সম্ভব হলে ঘণ্টাখানেক বাদ বাদ গাড়ি থামানো উচিত। সেই সুযোগে পা টানটান করে ছড়িয়ে নিন, সম্ভব হলে একটু হেঁটে নিতে পারেন। লক্ষ রাখবেন গাড়িতে যেন হাওয়া চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। কিছুতেই বুঝতে পারছেন না কীভাবে সিটবেল্ট বাঁধলে গর্ভস্থ শিশুর কোনও ক্ষতি হবে না? সরাসরি পেটের উপর দিয়ে যেন স্ট্র্যাপটা না যায়, একটু সরিয়ে বাঁধুন। ‘‘এই ছোট ছোট বিষয়গুলোর ব্যাপারে যত্নশীল হলে পেডাল ইডিমা বা ডিভিটি-র মতো সমস্যা এড়ানো সম্ভব,’’ বলছেন ডা. কুমরা।

Related Posts

© 2024 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy