ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউরিন ইনফেকশন একটি পরিচিত সমস্যা, যা নারী-পুরুষ উভয়কেই আক্রান্ত করতে পারে। তলপেটে ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াসহ এর বিভিন্ন অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। যদিও দ্রুত চিকিৎসা না নিলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে, তবে খাদ্যভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রেখেও এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। উত্তর প্রদেশের নোইডায় অবস্থিত ডিপার্টমেন্ট অব ইউরোলজি অ্যান্ড কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট-এর বিশেষজ্ঞ ডা. অমিত কে ডেভরার দেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যতালিকা এখানে তুলে ধরা হলো।
ইউরিন ইনফেকশন হলে যে খাবারগুলো ‘না’ বলবেন:
১. কফি, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: যতক্ষণ না ইউরিন ইনফেকশন সম্পূর্ণ সেরে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কফি, অ্যালকোহল এবং যেকোনো ক্যাফেইনযুক্ত খাবার বা পানীয় কঠোরভাবে বর্জন করুন। এই ধরনের পানীয় মূত্রাশয়ে জ্বালাতন বাড়াতে পারে এবং সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
২. চিনি ও চিনিযুক্ত খাবার: রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে তা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের ক্ষেত্রে ইউরিন ইনফেকশন বেশি দেখা যাওয়ার এটি অন্যতম কারণ। তাই চিনি এবং চিনিযুক্ত সব ধরনের খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. মসলাদার খাবার: ঝাল ও মসলাদার খাবার মূত্রাশয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই এই সময়ে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৪. সাইট্রিক ফল (সাময়িকভাবে): মূত্র সংক্রমণের সময় লেবু, কমলালেবুর মতো সাইট্রিক ফল সাময়িকভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। যদিও এই ফলগুলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং সংক্রমণ ভালো হলে তা পরবর্তী সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, তবে সংক্রমণের সময় এদের অ্যাসিডিটি মূত্রাশয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
দ্রুত সুস্থ হতে যে খাবারগুলো খাবেন:
১. প্রচুর জল পান: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর উপায়। প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে মূত্রাশয় থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সহায়তা করে। জল শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে জীবাণুগুলোকে বের করে দেয়।
২. জাম: জাম একটি উপকারী ফল যা ইউরিনারি ট্র্যাক্টে ব্যাকটেরিয়ার আটকে থাকা প্রতিরোধ করে। এটি শরীর থেকে সেই ব্যাকটেরিয়াকে বের করে দিতে সহায়তা করে।
৩. দই: দইয়ে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া বা প্রোবায়োটিকস মূত্রাশয়ের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত দই খেলে শরীরের অন্ত্রে এবং মূত্রনালীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে।
৪. ক্র্যানবেরি জুস: ক্র্যানবেরি একটি বিশেষ গুল্মজাতীয় ফল, যার রসে প্রচুর পরিমাণে ‘ফাইটোক্যামিকেল’ থাকে। এই ফাইটোক্যামিকেলগুলো ই-কোলাই (E.coli) ব্যাকটেরিয়ার মূত্রনালীর দেওয়ালে আটকে থাকাকে প্রতিরোধ করে এবং শরীর থেকে তাদের বাইরে পাঠিয়ে দিতে সহায়তা করে। তাই খাঁটি ক্র্যানবেরি জুস পান করা ইউরিন ইনফেকশনে খুব উপকারী।
ইউরিন ইনফেকশন হলে এই খাদ্যতালিকা মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সময় মতো অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পন্ন করুন। সঠিক খাবার ও চিকিৎসার সম্মিলিত প্রয়োগ আপনাকে দ্রুত সুস্থ করে তুলবে।