দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম ঘুম ভাব হওয়া খুবই স্বাভাবিক, বিশেষ করে কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকের ক্ষেত্রেই এটি একটি পরিচিত সমস্যা। অফিসে ঢুলুনি আসা কখনও কখনও বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে। কিন্তু খাওয়ার পরেই কেন এমন হয়? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো রোগ নয়, বরং শরীরের স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় পোস্ট প্রুডেনশিয়াল ড্রিনোমি বলা হয়। তবে কিছু বিশেষ কারণ এই অনুভূতিকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।
খাবারের পর ঘুম ঘুম ভাব এবং অলসতা বোধ হওয়ার কারণ:
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মানুষ খাবারের পরে বেশি ঘুম এবং অলস বোধ করেন। এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে:
হজম প্রক্রিয়ায় রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি: খাবার গ্রহণের পর পাচনতন্ত্রে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কিছুটা কমে যায়। এর ফলে তন্দ্রা বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভূত হতে পারে।
হরমোনের নিঃসরণ: খাবার পরিপাকতন্ত্রে পৌঁছানোর পর তা শক্তিতে রূপান্তরিত হয়, অর্থাৎ গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মস্তিষ্ককে ঘুমোনোর সংকেত দেয়।
সেরোটোনিনের উৎপাদন বৃদ্ধি: উচ্চ প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন বাড়ে। সেরোটোনিন ঘুম নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে ঘুমঘুম বা অলসতার অনুভূতি হয়।
ঘুমের অভাব বা অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস: যাদের ঘুমের অভাব রয়েছে বা ঘুমের ধরণ ঠিক নয়, তাদের ক্ষেত্রে খাওয়ার পরে ঘুম ঘুম ভাবের সমস্যা বেশি দেখা যায়।
শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: শারীরিক কার্যকলাপের প্রতি কম মনোযোগ দিলে তা ঘুমের ধরণকে প্রভাবিত করতে পারে এবং খাওয়ার পরে ঘুম ঘুম বা অলস বোধ হতে পারে।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ: দুপুরের খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট যেমন ভাত, রুটি, আলু বা মিষ্টি খেলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন মস্তিষ্কে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড পাঠাতে সাহায্য করে। ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিন এবং মেলাটোনিন তৈরি করে, যা ঘুমের কারণ।
দুপুরের খাওয়ার পর ঘুমের সমস্যা এড়ানোর উপায়:
যদিও কিছু প্রতিবেদনে দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার একটি স্বাভাবিক প্রবণতার কথা বলা হয়েছে, তবে কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব:
হালকা দুপুরের খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দুপুরে হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করা উচিত।
সুষম আহার: দুপুরের খাবার সবসময় সুষম রাখুন, যাতে প্রোটিন, ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের সঠিক অনুপাত থাকে।
অল্প পরিমাণে বারবার খাওয়া: একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ার পরিবর্তে অল্প অল্প করে কয়েকবার খান। এতে হজমের উপর চাপ কম পড়বে।
খাবারের পর হাঁটাহাঁটি: দুপুরের খাবারের পর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে ঘুম এবং অলসতার সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুমের অভাব দিনের বেলায় তন্দ্রাভাব বাড়াতে পারে।
নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা ঘুমের ধরণকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
এই সহজ টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনি দুপুরের খাবারের পর আসা ঘুম ঘুম ভাব এবং অলসতা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং কর্মক্ষেত্রে আরও সতেজ থাকতে পারবেন।