আপেলের গুণাগুণ নিয়ে যতই বলা হোক না কেন, তা শেষ হওয়ার নয়। কাঁচা হোক বা হালকা আঁচে ভেজে স্যালাডে, কাস্টার্ডে কিংবা পুডিং-এর মধ্যে—আপেলের স্বাদ কখনও নিরাশ করে না। শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও আপেলের ধারেকাছে কিছু নেই। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা থেকে শুরু করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখা—সব ক্ষেত্রেই আপেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও আপেলের জুড়ি মেলা ভার। সঠিক পরিমাণে আপেল খেলে তাই কমে যেতে পারে অতিরিক্ত ওজনও। ওজন কমাতে সিডার ভিনিগারের উপকারের কথা অনেকের জানা থাকলেও, অনেকেই জানেন না যে আরও একটি আপেল পানীয় ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে—সেটি হল আপেল চা। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন—বাড়িতে বানানো আপেল চা।
সাধারণত লিকার চায়ের সঙ্গে আপেল সেদ্ধ করে এই চা তৈরি করা হয়। স্বাদের জন্য সামান্য দারুচিনি বা লবঙ্গ গুঁড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে। আপেল চা গরম বা ঠান্ডা—দুই ভাবেই খাওয়া যেতে পারে। চাইলে সামান্য চিনিও মেশানো যেতে পারে এই আপেল চায়ে। কী এমন উপকার রয়েছে আপেল চা’তে? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:
১. ভিটামিন সি-এর উৎস: আপেল চায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। আপেলের টুকরোগুলো গরম জলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই ভিটামিন সি জলের মধ্যে মিশে যায়। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা পরোক্ষভাবে ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
২. ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর: আপেলের শাঁসের মধ্যে থাকে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল। এছাড়াও, আপেলের খোসা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কমাতে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
৩. হজমে সহায়ক: আপেলের মধ্যে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। আর একটি সুস্থ পৌষ্টিকতন্ত্র মানেই ওজনের উপর নিয়ন্ত্রণ। ফাইবার ছাড়াও আপেলে রয়েছে ম্যালিক অ্যাসিড, যা একইভাবে হজমের পথ পরিষ্কার রাখে।
৪. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: আপেলের প্রাকৃতিক শর্করা ফ্রুকটোজের মাধ্যমে আসে, যা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি বা হ্রাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে তাই আপেল চা খুবই উপকারী।
৫. নেগেটিভ ক্যালোরি ফল: আপেল একটি নেগেটিভ ক্যালোরি ফল। অর্থাৎ আপেলের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম। আমেরিকার কৃষি দফতরের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি মাঝারি আকারের আপেলের প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালোরির পরিমাণ মাত্র ৫০। তাই চায়ে হোক বা কাঁচা—ক্যালোরির চিন্তা না করেই আপেল খাওয়া যেতে পারে।
যেভাবে বানাবেন আপেল চা:
আপেল চা বানানোর পদ্ধতি খুবই সহজ। সাধারণত শীতের অঞ্চলে এই চায়ের ব্যবহার বেশি। এই চা বানাতে লাগবে:
একটা গোটা আপেল
তিন কাপ জল
এক টেবিল চামচ লেবুর রস
দুটো টি ব্যাগ (আপনার পছন্দের)
পরিমাণ মতো দারুচিনি গুঁড়ো
প্রণালী:
১. একটি পাত্রে জল নিয়ে তার মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে গরম করতে বসান।
২. জল ফুটতে শুরু করলে তার মধ্যে টি ব্যাগগুলো ডুবিয়ে দিন।
৩. হালকা আঁচে চা ফুটতে থাকলে সেই সময়ে আপেলটিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন।
4. আপেলের টুকরোগুলো ফুটন্ত চায়ের পাত্রে ফেলে দিন।
৫. পাঁচ মিনিট ফোটানোর পর দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে নিন।
৬. পরিমাণ মতো চিনি মিশিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। তবে চিনি এড়িয়ে যেতে পারলে তা আরও স্বাস্থ্যকর হবে।