‘হাম জাঁহা খরে হোতে হ্যায় লাইন বোহি সে শুরু হোতি হ্যায়…’- ভারতীয় বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির তিনি শাহেনশা, রিস্তে মে সকলের ‘বাপ’! আজ, ১১ অক্টোবর, মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনের (Amitabh Bachchan 83rd birthday) ৮৩তম জন্মদিন। তাঁর অভিনয় জীবনের মুকুটে ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, ‘জঞ্জির’, ‘সিলসিলা’-র মতো অসংখ্য ব্লকবাস্টার হিট সিনেমা রয়েছে। তবে কেরিয়ারের মধ্যগগনে থাকা সত্ত্বেও একসময় তিনি এমন একটি সিনেমা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে ওঠে।
বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর নাম এবং সংলাপ আজও দর্শক মহলে সমান জনপ্রিয়। এহেন অভিনেতা যখন খ্যাতির শিখরে, সেই সময় পরিচালক শেখর কাপুর তাঁর কাছে একটি সিনেমার প্রস্তাব নিয়ে আসেন। কিন্তু চিত্রনাট্য শোনার পর সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন বিগ বি। পরবর্তীকালে সেই সিনেমাই হয় সুপার ডুপার হিট।
কোন সেই সিনেমা যা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অমিতাভ?
সেই সিনেমার নাম ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ (Mr India)। হ্যাঁ, অনিল কাপুর, শ্রীদেবী ও অমরিশ পুরী অভিনীত কালজয়ী সিনেমা ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’-র চিত্রনাট্য প্রথম ফিরিয়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন। এই চিত্রনাট্য লিখেছিলেন বিখ্যাত লেখক জুটি সেলিম-জাভেদ, যাঁরা নাকি অমিতাভ বচ্চনকে মাথায় রেখেই চরিত্রটি লিখেছিলেন। চরিত্রটির সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল তার শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। বিগ বি প্রত্যাখ্যান করার পর চিত্রনাট্য নিয়ে শেখর কাপুর যান রাজেশ খান্নার কাছে, তিনিও ফিরিয়ে দেন ছবিটি। শেষমেশ ছবির প্রস্তাব পৌঁছয় অনিল কাপুরের কাছে। ১৯৮৭ সালের ২৫ মে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি সে বছরের দ্বিতীয় ব্লকব্লাস্টার হিট হয়েছিল।
কেন ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ করতে রাজি হননি বিগ বি?
খবর, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র মূল চরিত্রে একজন ম্যাজিক ঘড়ির সাহায্যে প্রায়শই অদৃশ্য হয়ে যান। এই ধারণার সঙ্গে সন্তুষ্ট ছিলেন না ‘শাহেনশা’। তাঁর মনে হয়েছিল, পর্দায় তাঁকে অনুপস্থিত দেখলে দর্শক তা মেনে নেবেন না। অর্থাৎ, যখন তিনি অদৃশ্য হয়ে যাবেন এবং কেবল তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, তখন দর্শক হয়তো সেই অনুপস্থিতি পছন্দ করবে না। মজার বিষয় হলো, রাজেশ খান্নাও একই কারণে ছবিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে অনিল কাপুরের কেরিয়ারে এই সিনেমাই ছিল অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট।
চিত্রনাট্য তৈরির নেপথ্যে জাভেদ আখতারের ভাবনা:
এক সাক্ষাৎকারে চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার জানান, “অমিতাভ যখন ইউরোপে একটি ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তখন একটি সিনেমার মহরৎ-এর জন্য তিনি না থাকলেও তাঁর কণ্ঠস্বর বাজিয়ে মহরৎ সম্পন্ন করা হয়েছিল। আমার ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’-র আইডিয়া সেখান থেকেই আসে। যদি তাঁর গলার স্বর এতটা জনপ্রিয় হয় ও দর্শক মনে ছাপ ফেলতে পারে, তবে এক অদৃশ্য মানুষ হিসাবে তাঁকে নিয়ে সিনেমা বানানোর ভাবনা আসে।”
পরে অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টে যায় এবং সেলিম-জাভেদ জুটি আলাদা হয়ে যান। চিত্রনাট্য রয়ে যায় সেলিমের কাছে। পরবর্তীতে বনি কাপুর সেই চিত্রনাট্য কিনে নেন এবং অনিল কাপুর ও শ্রীদেবীকে নিয়ে তৈরি হয় ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’। যদিও সেই সময় গুঞ্জন উঠেছিল, অমিতাভের কারণেই নাকি জাভেদ-সেলিমের বিচ্ছেদ হয়েছিল।
আজও বিনোদন দুনিয়ার ইতিহাসে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ এক অনবদ্য সিনেমা। অমিতাভ বচ্চন এই সিনেমায় অভিনয় করলে চিত্রটা কেমন হতো, তা আজও সিনেপ্রেমীদের কাছে এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন।