জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী প্রায়শই আলোচনায় থাকেন — কখনও রিয়েলিটি শো বা রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক, আবার কখনও বা একের পর এক সাফল্যের মাইলফলক স্পর্শ করে। তাঁর জীবন সঙ্গীতের সাথেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কিন্তু এই সঙ্গীতই একবার তাঁকে ফেলেছিল এক মহা বিপদে। এবার সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা নিজেই অনুরাগীদের সাথে ভাগ করে নিলেন ইমন, আর একই সাথে সকলকে সতর্কও করলেন।
বৃহস্পতিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করেন ইমন। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি চালকের আসনে বসে আছেন এবং পাশে বসে থাকা একজন তাঁকে জিজ্ঞেস করছেন, এখন তিনি কেন গাড়ি চালান না। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই শিল্পী শোনান তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
ইমন বলেন, “একদিন রুবির মোড়ে আমি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার গাড়িতে একটা গান চলছিল – গুলাম আলির সেই গান [গানের অংশ গেয়ে শোনান তিনি]।” তিনি এরপর যোগ করেন, “এই গানটা চলছিল। এদিকে আমার গাড়ি টক টক টক করে অ্যালার্ম দিয়ে যাচ্ছিল যে, আমার সামনে কিছু একটা রয়েছে। কিন্তু আমি সেটা শুনতেই পাইনি।”
এরপর যা ঘটেছিল তা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো, “তারপর আমার গাড়িটা গিয়ে অন্য একজনের গাড়িতে জোরে ধাক্কা দেয়। তারপর গাড়িতে প্রবল একটা শব্দ হয়। ভাগ্য ভালো যে দুটো গাড়ি খুব শক্তপোক্ত ছিল বলে কিছু হয়নি।” ইমন জানান, যে ভদ্রলোকের গাড়িতে ধাক্কা লেগেছিল, তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক এবং অত্যন্ত ভালো ও বিনয়ী একজন মানুষ ছিলেন, তাই তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
এই দুর্ঘটনার পর থেকে ইমনের জীবনে এক বড় পরিবর্তন আসে। তিনি বলেন, “তারপর থেকে গাড়িতে আমি গান চালানো বন্ধ করে দিয়েছি। ওই যে আমি একটা ভয় পেয়েছিলাম, সেই দিনের পর আজ আমি প্রথম গাড়ি নিয়ে বের হলাম।”
নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার পর গায়িকা তাঁর সকল শ্রোতা ও দর্শকদের প্রতি একটি ছোট অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার যারা শ্রোতা ও দর্শক রয়েছেন, তাঁদের কাছে আমার ছোট্ট অনুরোধ। আপনারা যাঁরা শিল্পী, যাঁরা গান বাজনার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা গাড়ি চালাতে চালাতে দয়া করে এমন কোনো গান শুনবেন না, যে গান শুনে আপনারা হারিয়ে যাবেন। সেফলি ড্রাইভ করুন।”
ইমনের মতে, “যদি মনে হয় সেই সময় গান চালালে একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছেন, তাহলে সেই সময়টা গানটা বন্ধ করে রাখা উচিত বলে মনে হয় আমার। সেই কারণে আমি এত দিন [গাড়ি] চালাইনি, আজ আবার সাহস করে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। ভালো থাকুন সবাই।”
উল্লেখ্য, ‘সারেগামাপা’ থেকে শুরু করে রক্তদান পর্যন্ত নানা বিষয়ে ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন ইমন চক্রবর্তী। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার ধরন থেকে শাখা-পলা না পরা — কোনও কিছুই ট্রোলিংয়ের তালিকা থেকে বাদ যায়নি। যদিও শিল্পী মানসিক দিক থেকে বহুবার ভেঙে পড়েছেন, তবুও তিনি হার মানেননি, আর এই কথা নিজেই বহুবার সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। এই নতুন ভিডিওর মাধ্যমে তিনি শুধু তাঁর অভিজ্ঞতা নয়, সচেতনতার এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিলেন।