বাংলাদেশে জুলাই বিপ্লবের সেই উত্তাল আবেগ কি তবে শেষের পথে? নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে বড়সড় ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক শক্তি ‘ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি’ (NCP)। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দলটিতে এখন গণপদত্যাগের ধুম লেগেছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ও ‘মাস্টার অফ স্ট্রেটেজি’ মাহফুজ আলমের কাছ থেকে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। এই হাই-ভোল্টেজ ভোটের আগে এনসিপি-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার ঘোষণা দিতেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাহফুজ আলম স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি আর এই দলের অংশ থাকতে চান না। তার পথ অনুসরণ করে ৩০ জন সিনিয়র নেতা জোটের বিরোধিতা করে স্মারকলিপি দিয়েছেন এবং দুই শীর্ষ নেতা ইতিমধ্যে দল ছেড়েছেন।
নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে মাহফুজ আলম সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমি এই এনসিপি-র অংশ হতে অস্বীকার করছি।” তিনি আরও যোগ করেন যে, ঢাকার যেকোনো আসন থেকে জোটের প্রার্থী হওয়ার প্রলোভনের চেয়ে নিজের পুরনো আদর্শিক অবস্থান ধরে রাখা তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, এই মাহফুজ আলমকেই গত বছর নিউ ইয়র্কে বিল ক্লিনটনের সামনে আন্দোলনের মূল কারিগর হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
এদিকে দলের ভেতরে গৃহযুদ্ধ শুরু হলেও নাহিদ ইসলাম একে কেবলই একটি ‘নির্বাচনী কৌশল’ হিসেবে দেখছেন। রবিবার রাতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটি আদর্শিক কোনো জোট নয়, স্রেফ নির্বাচনী চুক্তি। বর্তমান পরিস্থিতিতে একা লড়াই করা সম্ভব নয় বলেই ৮টি সমমনা দলের সঙ্গে এই সমঝোতা।” তবে বিক্ষোভকারীদের সাফ কথা, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা থাকা জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানো জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনার পরিপন্থী। সব মিলিয়ে নির্বাচনের ঠিক আগে বাংলাদেশে এখন এক চরম অস্থির রাজনৈতিক আবহাওয়া বিরাজ করছে।