কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন শ্রম আইন ঘোষণার পর দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ বেসরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত নিয়মে বড়সড় বদল আনার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে খুশি কর্মজীবী মানুষ। নতুন শ্রম বিধিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদের (Fixed-term) কর্মীরা মাত্র এক বছর একটানা চাকরি করলেই গ্র্যাচুইটির সুবিধা পাবেন।
আগেকার নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো সংস্থায় গ্র্যাচুইটি পাওয়ার জন্য অন্তত পাঁচ বছর একটানা কাজ করা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু বর্তমান কর্মসংস্থানের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র এই সময়সীমা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য হলো, কর্মীদের দ্রুত সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করা। তবে প্রশ্ন উঠছে, আইন ঘোষণা হওয়া সত্ত্বেও কর্মীরা কেন এখনও এর সুফল পাচ্ছেন না?
বাস্তবায়নে কেন এই বিলম্ব? ভারতে শ্রম আইন ‘যুগ্ম তালিকাভুক্ত’ (Concurrent List) বিষয়। এর অর্থ হলো, কেন্দ্রীয় সরকার আইন তৈরি করলেও তা কার্যকর করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারগুলির ওপর ন্যস্ত থাকে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্যকে এই কেন্দ্রীয় আইনের ভিত্তিতে নিজস্ব নিয়মাবলী বা ‘স্টেট রুলস’ বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হয়। যতক্ষণ না রাজ্য সরকারগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিয়ম জারি করছে, ততক্ষণ বেসরকারি সংস্থাগুলি আইনত এটি মানতে বাধ্য নয়। এটিই হলো সুফল না পাওয়ার প্রধান অন্তরায়।
কোম্পানিগুলির অবস্থান: রাজ্য স্তরে আইনি স্বচ্ছতা না থাকায় বেশিরভাগ কর্পোরেট সংস্থা এখনও পুরনো পাঁচ বছরের নিয়ম মেনেই কাজ করছে। সংস্থাগুলির দাবি, সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা বা নোটিফিকেশন ছাড়া নতুন নিয়ম চালু করলে ভবিষ্যতে অডিট বা ট্যাক্স সংক্রান্ত তদন্তে জটিলতা তৈরি হতে পারে। আইনি ঝামেলা এড়াতেই তারা আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণ করেছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট: অনেক রাজ্য সরকার ট্রেড ইউনিয়ন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (MSME) খাতের পক্ষ থেকে আসা বিভিন্ন আপত্তি খতিয়ে দেখছে। নতুন শ্রম বিধিতে কর্মঘণ্টা এবং ওভারটাইম সংক্রান্ত আরও অনেক বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে বিতর্ক চলছে। কিছু রাজ্য খসড়া নিয়ম তৈরি করলেও, পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত এই অচলাবস্থা কাটলে কোটি কোটি বেসরকারি কর্মী আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।