মিষ্টি স্বাদের জন্য মধুর প্রতি দুর্বলতা কমবেশি আমাদের সকলেরই থাকে। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা—সারা বছর ধরেই প্রতিটি ঘরে এই প্রাকৃতিক উপাদানের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। শুধু ঠান্ডা লাগা বা কাশি থেকে মুক্তিই নয়, মেদ ঝরাতে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণ রুখতে মধুর ভূমিকা অপরিহার্য। প্রাকৃতিকভাবে মধু অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে, তাই ক্ষত নিরাময়েও এর ব্যবহার দেখা যায়।
তবে, মধুর চাহিদা বাড়ার সাথে সাথেই বাজারে ভেজাল মধুর সরবরাহও বহুগুণ বেড়েছে। এমনকি, নামি ব্র্যান্ডের মধুতেও ভেজাল মেশানোর অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু খাঁটি মধু চিনে নেওয়ার কিছু সহজ উপায় রয়েছে, যা জানা থাকলে বিক্রেতা চাইলেও আপনাকে ঠকাতে পারবেন না।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক সেই অত্যন্ত সহজ এবং কার্যকরী ৫টি উপায়:
১. জলের পরীক্ষা: ‘থিতিয়ে যাওয়া’ দেখেই খাঁটি মধু চিনুন
খাঁটি মধু চেনার এটি সবচেয়ে সহজ পরীক্ষা।
একটি গ্লাসে জল নিয়ে তাতে এক চামচ মধু মেশান।
যদি মধু মেশানোর সঙ্গে সঙ্গেই জলের সাথে সহজে মিশে যায়, তবে বুঝবেন সেটি ভেজাল।
খাঁটি মধু: প্রথমে গ্লাসের তলায় দলা পাকিয়ে থিতিয়ে পড়বে এবং ধীরে ধীরে জলের সাথে মিশবে।
২. পেপার টাওয়েলের পরীক্ষা: শোষণ ক্ষমতা কতটুকু?
পেপার টাওয়েল ব্যবহার করেও মধুর বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা যায়।
একটি পেপার টাওয়েলের উপর কয়েক ফোঁটা মধু ফেলুন।
যদি পেপার টাওয়েলটি সঙ্গে সঙ্গে মধু শুষে নেয়, তাহলে বুঝবেন সেই মধুতে ভেজাল রয়েছে (সাধারণত জল মেশানো)।
খাঁটি মধু: সহজে পেপার টাওয়েলে মিশতে বা শোষিত হতে চাইবে না।
৩. আগুনের পরীক্ষা: ক্যারামেলাইজড হওয়া জরুরি
আগুনে পুড়িয়েও মধু খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করা যায়।
একটি চামচে অল্প মধু নিয়ে কিছুক্ষণ গ্যাসের আঁচে ধরুন।
যদি মধুর রং পরিবর্তিত হয়ে গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং ক্যারামেলাইজড হয়ে যায়, তাহলে সেই মধু খাঁটি।
ভেজাল মধু: আগুনের আঁচে ধরলে পুড়ে যাবে বা ফেনার মতো কিছু তৈরি হবে।
৪. জমাট বাঁধার পরীক্ষা: শীতকালে জমছে কি?
খাঁটি মধুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর জমাট বাঁধার প্রবণতা।
খাঁটি মধু ঠান্ডায় বা দীর্ঘ দিন রেখে দিলে জমে গিয়ে দানাদার (ক্রিস্টাল) আকার ধারণ করে। এটি খাঁটি মধুর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
তবে যদি মধুতে ভেজাল মেশানো থাকে অথবা মধু তৈরির সময় অতিরিক্ত তাপ ব্যবহার করা হয়, তবে মধু সব সময় তরল থাকবে এবং শীতকালেও জমবে না।
৫. আঙুলের পরীক্ষা: চটচটে ভাবই আসল রহস্য
সামান্য মধু আঙুলে নিয়ে ঘষে দেখুন।
যদি মধু চটচটে লাগে এবং সহজে ত্বকের সাথে মিশে না যায়, তাহলে বুঝবেন সেই মধু খাঁটি।
ভেজাল মেশানো মধু আঙুলে লাগানোর সাথে সাথেই ত্বকের সাথে মিশে যাবে এবং তেমন চটচটে ভাব থাকবে না।
এই সহজ পরীক্ষাগুলো করার মাধ্যমে আপনি সহজেই খাঁটি মধু চিনতে পারবেন এবং ভেজাল মধু কিনে ঠকে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। তাই মধু কেনার সময় এই বিষয়গুলো অবশ্যই মনে রাখবেন।