মাওবাদী দমনে ছত্তিশগড় পুলিশ পেল এক বিশাল সাফল্য। দান্তেওয়াড়া জেলায় একসঙ্গে ৩৭ জন মাওবাদী সদস্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আত্মসমর্পণ করেছে। এই আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ১২ জন মহিলা সদস্যও রয়েছেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আত্মসমর্পণ করা এই মাওবাদীদের মধ্যে ২৭ জনের মাথার দাম ছিল, যার সম্মিলিত মূল্য প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা।
মাওবাদীদের এই দলটির আত্মসমর্পণ দান্তেওয়াড়ার ডিআরজি (District Reserve Guard) অফিসে উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়।
নজরদারির জাল: আত্মসমর্পণে বাধ্য মাওবাদীরা
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিআরজি, বস্তার ফাইটার্স, স্পেশাল ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (SIB) এবং সিআরপিএফ (CRPF)-এর মতো বিশেষ দলগুলি বিগত কয়েক মাস ধরে এই মাওবাদী সদস্যদের উপর নিবিড় নজরদারি চালাচ্ছিল। দীর্ঘ এবং কৌশলী নজরদারির ফলেই মাওবাদীরা কার্যত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত ২০ মাসে দান্তেওয়াড়া থেকে মোট ৫০৮ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে ১৬৫ জনের জন্য সরকারি পুরস্কার ঘোষণা করা ছিল। দেশজুড়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১,১৬০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে।
কারা এই আত্মসমর্পণকারীরা?
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কুখ্যাত মাওবাদী সদস্য, যাদের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ ছিল।
-
কুমলি ওরফে অনিতা মান্ডাভি
-
গীতা ওরফে লক্ষ্মী
-
রঞ্জন মান্ডাভি
-
ভীমা (যার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের এক সংঘর্ষে ২৬ জন জওয়ান শহিদ ও অস্ত্র লুটের অভিযোগ ছিল)
উল্লিখিত এই চারজনের প্রত্যেকের মাথার দাম ছিল ৮ লক্ষ টাকা। এছাড়াও এলাকার কমিটি বা জনতা সরকারের সঙ্গে যুক্ত এমন অনেক সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে, যাদের মাথার দাম ছিল ৫ লক্ষ, ২ লক্ষ বা ১ লক্ষ টাকা। এঁদের অনেকেই রাস্তা কাটা বা আইইডি (IED) তৈরির মতো নাশকতার কাজে দক্ষ ছিল।
পুনর্বাসন: মূল স্রোতে ফেরার সুযোগ
ছত্তিশগড় সরকারের পুনর্বাসন নীতি অনুযায়ী, আত্মসমর্পণকারী এই মাওবাদী সদস্যদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
-
প্রাথমিক সাহায্য: প্রত্যেকে প্রাথমিকভাবে এককালীন ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা পাবেন।
-
দক্ষতা প্রশিক্ষণ: তাদের কৃষি ও কারিগরি দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তারা স্বনির্ভর হতে পারে এবং রোজগারের পথ খুঁজে নিতে পারে।
এই পদক্ষেপগুলির মাধ্যমে প্রশাসন মাওবাদী সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে এবং সুস্থ সমাজের অংশ হতে উৎসাহিত করছে।