উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকায় হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন বহু গৃহ সহায়িকা। অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা বা SIR (Special Intensive Revision) ঘোষণার পর থেকেই তাঁদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিরাটি, বিশরপাড়া, দমদম, মধ্যমগ্রাম জুড়ে বহু গৃহকর্ত্রীই দাবি করেছেন, তাঁদের দীর্ঘদিনের পরিচারিকারা কাজ ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে গেছেন।
‘রহিমার মা’ উধাও, গৃহকর্ত্রীদের উদ্বেগ:
বিরাটির শরৎ কলোনির বাসিন্দা অপলা মিত্রর কথায় এই উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, ২৫ বছর ধরে তাঁর বাড়িতে কাজ করতেন ‘রহিমার মা’।
অপলা দেবী বলেন, “হঠাৎই একদিন এসে বলেন, আমরা কাজ ছেড়ে দেবো। কী সব হচ্ছে, এখানে আর থাকা যাবে না। আমরা সবাই রহিমার মা বলেই ডাকতাম। কিন্তু ও খুব ভয় পাচ্ছিল। বলেছিল, সবাই বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে।” এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি।
একই পরিস্থিতি বিরাটির গীতিকা বসুর বাড়িতেও। তাঁর দীর্ঘদিনের গৃহ সহায়িকা হঠাৎই জানিয়ে দেন, আর কাজ করতে পারবেন না। গীতিকা দেবী বলেন, “ও বলল, সবাই বাংলাদেশ চলে যাচ্ছে। ওদের ওখানে যারা থাকে তারা আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে। আমি কিছু বুঝতে পারিনি, কিন্তু তারপর থেকেই আর কাজ করতে আসেনি।”
নাগরিকত্বের প্রমাণ নিয়ে আতঙ্ক:
অন্যদিকে, বিশরপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ আলমের কণ্ঠেও উদ্বেগ স্পষ্ট। তিনি বলেন, “আমার ভোটার কার্ডে নাম আছে, ভোটও দিয়েছি। বউয়েরও নাম আছে। কিন্তু ২০০২ সালের আগের নথি আমাদের নেই। এখন যদি তাড়িয়ে দেয়, তাহলে কোথায় যাব?”
একই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় মহিলা সাবিনা বিবি। তাঁর দাবি, “আমার কাগজপত্র সব আছে কারণ আমি এখানেই জন্মেছি। কিন্তু আমার মা-বাবার নেই। যদি তাঁদের যেতে হয়, আমি একা থাকব কীভাবে? আমরা সবাই ভীষণ আতঙ্কে আছি।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:
উল্লেখ্য, SIR ঘোষণার মূল লক্ষ্য হল শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় থাকা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই সীমান্তবর্তী এলাকায় ভয় ও বিভ্রান্তি তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে। কেউ কাজ ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন, কেউ আবার নাগরিকত্বের প্রমাণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই ঘটনায় শুধু প্রশাসনিক স্তরেই নয়, রাজনীতির মঞ্চেও এখন নতুন সমীকরণ এবং বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।