মাইক্রোওয়েভে রান্না খাবার খাচ্ছেন? যেসব বিপদ ডেকে আনছেন! জেনেনিন

আধুনিক রান্নাঘরের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ মাইক্রোওয়েভ ওভেন। বাইরে থেকে আনা খাবার গরম করা থেকে শুরু করে অল্প তেলে বা তেলবিহীন রান্না—অনেক গৃহিণীর কাছেই এটি এক অপরিহার্য যন্ত্র। তবে জানেন কি, নিয়মিত মাইক্রোওয়েভে রান্না করা খাবার আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাইক্রোওয়েভ আধুনিক জীবনের অন্যতম ভরসা হলেও এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। এই যন্ত্রে মাছ, মাংস বা ডাল যাই রান্না করা হোক না কেন, তা ডি-নেচারড হয়ে যায়। খাবারের বহু খাদ্যগুণ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, একটানা মাইক্রোওয়েভে রান্না করা খাবার খেলে ক্যান্সারসহ নানা মারাত্মক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পুষ্টিবিদদের মতে, মাইক্রোওয়েভে রান্না বা খাবার গরম করার সময় যে রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়, তা আমাদের শরীর এবং পরিবেশ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। রেস্তোরাঁ থেকে আনা ডিপ ফ্রাই করা খাবার যখন মাইক্রোওয়েভে গরম করা হয়, তখন তাতে থাকা ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

এই বিষয়ে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণা চালিয়েছেন। এক সময়ে রাশিয়ার কিছু জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণরূপে মাইক্রোওয়েভের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এর ফলস্বরূপ, অনেকেরই রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পাশাপাশি, তীব্র মাথাব্যথা, চোখে যন্ত্রণা, অনিদ্রা এবং সারাদিন ধরে ঘুম ঘুম ভাবের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এখানেই শেষ নয়, একই সময়ে পেটে ব্যথা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, মনোযোগের অভাব এবং হজমের গোলমালের মতো একাধিক শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। এত সংখ্যক মানুষের অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে দেশটির সরকার দ্রুত এক হাজার গবেষকের একটি দল গঠন করে সমীক্ষা শুরু করে। তখনই আসল সত্যটি সামনে আসে। এই রোগের নামকরণ করা হয় ‘মাইক্রোওয়েভ সিকনেস’।

আসুন জেনে নেওয়া যাক, মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্যের কী কী ক্ষতি হতে পারে:

দুধের অ্যামিনো অ্যাসিড নষ্ট করে: মাইক্রোওয়েভে দুধ ফোটানো উচিত নয়। কারণ এতে দুধের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এমনকি উপকারী অ্যামিনো অ্যাসিড পরিবর্তিত হয়ে বিষাক্ত রাসায়নিকে পরিণত হতে পারে, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

মাংসের বিষাক্ত যৌগ তৈরি করে: মাইক্রোওয়েভে চিকেন বা মাটন রান্না করা সহজ হলেও, মাংসে থাকা বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড ওভেনের প্রভাবে ডি-নাইট্রোসোডিএন্থানল অ্যামিনস নামক বিষাক্ত যৌগ তৈরি করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

শাকসবজির পুষ্টিগুণ কমিয়ে বিষাক্ত করে: ডিপ ফ্রিজে রাখা রান্না করা সবজি মাইক্রোওয়েভে গরম করলে তার উপকারী প্ল্যান্ট অ্যালকালয়েড বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হতে পারে, যা শরীরে বিভিন্ন রোগের জন্ম দিতে পারে।

মূল জাতীয় সবজির ক্ষতি: বিট, গাজর, মুলার মতো রুট ভেজিটেবলস মাইক্রোওয়েভে গরম করলে তাদের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ভিটামিন ও খনিজ ধ্বংস করে: খাবারে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাইক্রোওয়েভের কারণে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়: নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের রান্না খেলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গলস্টোন, বন্ধ্যাত্ব, ছানি এবং ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজের প্রবণতা বাড়ে।

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়: মাইক্রোওয়েভের প্রভাবে করোনারি আর্টারিতে (হার্টের রক্তবাহী ধমনি) চর্বির স্তর জমার গতি দ্রুত হয়, ফলে হৃদরোগ এবং আকস্মিক হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

হজমক্ষমতা কমায়: নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের খাবার খেলে হজমক্ষমতা একেবারে কমে যায় এবং লাগাতার বদহজম চলতে থাকে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়: নিয়মিত মাইক্রোওয়েভের রান্না খেলে লসিকাগ্রন্থির কর্মক্ষমতা কমে যায়। লসিকা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাই এই যন্ত্রের ব্যবহার লসিকার কার্যকারিতা কমিয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। মাইক্রোওয়েভের খাবার খেলে অন্ত্র এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রবণতাও বাড়ে।

মস্তিষ্কের ক্ষতি করে: লাগাতার মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারে মস্তিষ্কের তরঙ্গ এলোমেলো হয়ে যায়। এতে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে শুরু করে। স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি, স্থিরতা এবং ধৈর্য কমতে থাকে।

অতএব, সুস্থ জীবন যাপনের জন্য মাইক্রোওয়েভের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং এর ব্যবহার সীমিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy