অন্তর্বাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। তবে অনেকেই এই পোশাকটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে ভুল করে থাকেন। বিশেষ করে কম দামের, মানহীন অন্তর্বাস ব্যবহারের মাধ্যমে অজান্তেই ডেকে আনছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি!
দামী পোশাকের পিছনে অর্থ খরচ করলেও, অন্তর্বাস কেনার সময় অনেকেই তেমন গুরুত্ব দেন না। অথচ এটিই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভুল অন্তর্বাস ব্যবহারের ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই হয়তো জানেন না, অন্তর্বাসও স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ভুল অন্তর্বাস পরে আপনি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
আঁটোসাঁটো পোশাক পরিধানের প্রবণতা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। তবে এটি স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে টাইট অন্তর্বাস পরার ফলে শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলিতে বাতাস চলাচল করতে পারে না। এর ফলে ওই স্থান সর্বদা ঘামে ও নোংরা থাকে, যা ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির আদর্শ ক্ষেত্র তৈরি করে।
এই পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এবং সংক্রমণ এড়াতে সর্বদা উন্নতমানের অন্তর্বাস ব্যবহার করা উচিত। টাইট অন্তর্বাস পরার কারণে বাতাস যখন ওই অঙ্গগুলিতে পৌঁছাতে পারে না, তখন সংক্রমণ, চুলকানি সহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দিতে পারে। জেনে নিন টাইট অন্তর্বাস পরলে আর কী কী সমস্যা হতে পারে:
ব্যায়ামের সময় বিপজ্জনক: ব্যায়াম করার সময় অনেকেই টাইট পোশাক পরেন, যা বিপজ্জনক হতে পারে। ঘামলে ত্বক আর্দ্র হয়ে পড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে।
পেটে চাপ ও হজমের সমস্যা: টাইট অন্তর্বাস পরলে পেটে চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও গ্যাস্ট্রিকের মতো হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রক্ত চলাচল ব্যাহত: অনেক সময় টাইট পোশাক পরার ফলে শরীরের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণে অঙ্গে অসাড়তা ও জ্বালা অনুভূত হতে পারে। এমনকি ডার্মাটাইটিস ও ফলিকুলাইটিসের মতো ত্বকের রোগও টাইট অন্তর্বাস বা বক্ষবন্ধনী পরার কারণে হতে পারে।
সিন্থেটিক কাপড়ের বিপদ: অনেকেই রং দেখে অন্তর্বাস কেনেন, কিন্তু কাপড়ের উপাদান (ফেব্রিক্স) দেখেন না। মনে রাখবেন, সিন্থেটিক আন্ডারগার্মেন্টস আপনার শরীরের জন্য বিষের চেয়ে কম নয়। এটি ত্বকের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
রঙিন অন্তর্বাসের প্রতিক্রিয়া: রঙিন অন্তর্বাসে ব্যবহৃত রাসায়নিক রং ত্বকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, ফোলা দাগ ও চুলকানির মতো অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ছত্রাক সংক্রমণের কারণ: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল অন্তর্বাস ছত্রাক সংক্রমণের জন্য দায়ী। রঙিন কাপড়ে ব্যবহৃত ক্ষতিকারক রং ত্বকের সরাসরি সংস্পর্শে আসলে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
না ধোয়া অন্তর্বাসের ঝুঁকি: না ধুয়ে বারবার একই অন্তর্বাস ব্যবহারের ফলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। নিয়মিত পরিষ্কার না করলে চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
কম দামের অন্তর্বাস পরিহার করুন: কম দামের অন্তর্বাস কিনবেন না, কারণ সেগুলোর মান ভালো হয় না। যা আপনার স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ত্বকের সংক্রমণ, চুলকানি, র্যাশ, ইউটিআই (মূত্রনালীর সংক্রমণ) এর মতো সমস্যা হতে পারে এমন অন্তর্বাস ব্যবহারের ফলে।
সঠিক মাপের বক্ষবন্ধনী: এক সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ নারী ভুল মাপের বক্ষবন্ধনী পরেন। তাই এটি কেনার সময় সঠিক মাপ নিয়ে কিনুন। অতিরিক্ত টাইট বক্ষবন্ধনী স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। দীর্ঘক্ষণ সিনথেটিক অন্তর্বাস পরা ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর।
করণীয়: নিয়মিত সুতির (কটন) অন্তর্বাস ব্যবহার করা স্বাস্থ্যসম্মত। একইসঙ্গে জিম, জগিং, খেলাধুলা বা ইয়োগা করার সময় স্পোর্টস ব্রা পরিধান করুন, যা আরামদায়ক এবং শরীরের সঠিক সাপোর্ট দেবে। আপনার স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় সঠিক অন্তর্বাস নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।