খাওয়ার শেষে মুখশুদ্ধি হিসেবে জোয়ান খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। কেউ হয়তো এর হজমকারক গুণের কথা জানেন। তবে জোয়ান খাওয়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য যে কতখানি উপকারী, তা জানলে আপনি অবাক হবেন। এটি খেলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সহজেই দূর করা যায়।
জানলে বিশ্বাস হবে না, নিয়মিত জোয়ান খেলে ১৫টি রোগ আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না! প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্রে জোয়ানের কার্যকারিতার উল্লেখ রয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে কফ-কাশি থেকে শুরু করে পেটে ব্যথা-বদহজমের সমস্যাসহ একাধিক রোগের দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ছোট্ট বীজ। নিয়মিত জোয়ান খেলে কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, চলুন জেনে নেওয়া যাক:
চিকিৎসকদের মতে, পেটের যাবতীয় সমস্যা যেমন – পেটে ব্যথা, গ্যাস, বমি বমি ভাব, অ্যাসিডিটি সবকিছু দূর করতে পারে জোয়ান। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও ল্যাক্সাটাইভস থাকে। তাই বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও নিরাময় হয়।
এছাড়াও, কিডনির নানা সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে জোয়ান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনির পাথর দূর করতেও সাহায্য করে এটি।
ক্রমাগত হেঁচকি উঠলে সামান্য জোয়ানের জল বা জোয়ান বাটা খেলে মুহূর্তেই স্বস্তি মেলে। তবে মনে রাখবেন, কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। পরিমাণ মতো জোয়ান খান। বেশি খেলে পেট গরম হতে পারে।
ওজন কমাতেও জোয়ান বেশ কার্যকরী উপাদান। এটি শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ফ্যাট বার্ন হয় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে রাতে এক গ্লাস জলে জোয়ান ভিজিয়ে রেখে, পরদিন সকালে ওই জল পান করুন। জোয়ান ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় ওজন কমাতে বিশেষ সাহায্য করে।
পিরিয়ডের ব্যথায় প্রায় সব নারীই প্রতি মাসে কষ্ট পান। এক্ষেত্রে হালকা গরম জলে জোয়ান মিশিয়ে খেলে তলপেট ও কোমরের ব্যথা কমে। তবে রক্তপাত বেশি হলে জোয়ান না খাওয়াই ভালো।
জোয়ান খেলে শরীরের টক্সিন দূর হয়। তাই মুখগহ্বর পরিষ্কার রাখতে বা দুর্গন্ধ দূর করতে এটি খুব কাজে আসে।
জোয়ানে আছে থিমল তেল, যা যেকোনো ব্যথা কমাতে কার্যকর। জোয়ানের তেল আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর্থ্রাইটিস বা গাঁটের ব্যথাও নিরাময় করে জোয়ান।
জোয়ানে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের প্রভাবে ঠান্ডার সমস্যা কমে। বুকে জমা শ্লেষ্মা কাটাতে জোয়ানের জল খুব উপকারী। এছাড়াও, গলায় ব্যথা হলে জোয়ান ও লবণ মেশানো গরম জলের ভাপ নিলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
মাথাব্যথাও কমাতে পারে জোয়ান। এর জন্য জোয়ানের গুঁড়ো করে একটি কাপড়ে মুড়ে তা শুঁকলে মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মেলে। এমনকি, জোয়ান বেটে কপালে লাগালেও মাইগ্রেনের ব্যথা কমে।
ব্রণের দাগ দূর করতে আক্রান্ত স্থানে জোয়ান বেটে লাগান। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলুন। ধীরে ধীরে ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি মিলবে। জোয়ানে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকায় চুল ও ত্বকের ছত্রাকজনিত সংক্রমণও সারে।
জোয়ান খেলে ম্যালেরিয়া জ্বরের শীতের প্রকোপ কমে এবং ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে। এমনকি, জোয়ান গরম জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে শ্বাসকষ্টও দূর হয়। জোয়ানের আরক খেলেও উপকার পাওয়া যায়।
জোয়ান বাটা ও গুড় সমপরিমাণে মিশিয়ে সকাল ও সন্ধ্যায় অল্প করে খেলে অর্শ্বের ব্যথা কমে ও কোমরের ব্যথা সারে। এছাড়াও, জোয়ান আর তিল একসঙ্গে পিষে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কৃমির সমস্যা সমাধানেও জোয়ান অত্যন্ত কার্যকর। অনেক শিশুই কৃমির সমস্যায় ভোগে। নিয়মিত জোয়ান খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অ্যাসিডিটির সমস্যায় প্রায় সকলেই ভোগেন। গলা যন্ত্রণা, বুক যন্ত্রণা, ঢেঁকুর তোলা – সব মিলিয়ে অ্যাসিডিটি হলে কষ্টের সীমা থাকে না! এসব থেকে বাঁচতে নিয়মিত জোয়ান খেতে পারেন। এর জন্য প্রতিদিন ১ চামচ জোয়ান ও ১ চামচ লবণ এক গ্লাস হালকা গরম জলে মিশিয়ে খেতে হবে।
দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, মাড়িতে ঘা বা ব্যথা হলে জোয়ান অত্যন্ত কার্যকরী। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ব্যথার উপশম করতে পারে। নর্থ ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা অনুযায়ী, দাঁতের মাড়ির সংক্রমণ দূর করতেও পারে জোয়ান। এর জন্য হালকা গরম জলে জোয়ান মিশিয়ে গার্গল করতে পারেন বা জোয়ানের তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি, জোয়ান পাউডার দিয়ে ব্রাশ করলেও ব্যথা কমে।
সুতরাং, খাওয়ার পর সামান্য জোয়ান মুখে দেওয়ার অভ্যাস শুধু মুখশুদ্ধিই নয়, আপনার শরীরের জন্য এক দারুণ উপকারী দাওয়াইও বটে। তাই আজ থেকেই এই অভ্যাসটিকে গুরুত্ব দিন এবং বহু রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।