রাধিকা খুনে নয়া মোড়! মিউজিক ভিডিওতে মেয়ের ঘনিষ্ঠ দৃশ্যই বাবার ক্ষোভের মূল কারণ?

জাতীয় স্তরের টেনিস খেলোয়াড় রাধিকা যাদবকে তাঁর বাবা দীপক যাদবের গুলিতে হত্যার ঘটনায় একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে যে চিত্র ফুটে উঠছে, তা কেবল পারিবারিক বিবাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং আর্থিক অস্বচ্ছলতা, সামাজিক টিটকারি এবং আধুনিক জীবনের সঙ্গে পুরনো ধ্যান-ধারণার সংঘাতের এক করুণ প্রতিচ্ছবি। গুরুগ্রাম পুলিশ সূত্রে খবর, মেয়ের ক্রমবর্ধমান আর্থিক স্বনির্ভরতা, টেনিস অ্যাকাডেমি পরিচালনা এবং সম্প্রতি একটি মিউজিক ভিডিওতে রোম্যান্টিক দৃশ্যে উপস্থিতিই বাবার ক্ষোভের মূল কারণ।

ঘটনাস্থলে যা ঘটলো
গত বৃহস্পতিবার সকালে গুরুগ্রামের অভিজাত সুশান্ত লোক এলাকায় নিজ বাড়িতেই ২৫ বছর বয়সী রাধিকাকে তাঁর লাইসেন্স করা .৩২ বোর রিভলভার থেকে গুলি করে হত্যা করেন বাবা দীপক যাদব। পাঁচ রাউন্ড গুলি চালানো হয়, যার মধ্যে তিনটি রাধিকার শরীরে বিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর দীপককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে খুন ও অস্ত্র আইনে মামলা রুজু হয়েছে।

অ্যাকাডেমি ও সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ
পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, দুই বছর আগে একটি চোট পাওয়ার পর রাধিকা পেশাদার টেনিস থেকে সরে এসে নিজের একটি টেনিস অ্যাকাডেমি শুরু করেন। পাশাপাশি, ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন রিল বানানো এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকা তাঁর নিত্য অভ্যাস ছিল। অভিযোগ, এই বিষয়গুলি দীপক যাদব ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না।

তদন্তকারীদের মতে, সম্প্রতি প্রকাশিত ‘কারওয়ান’ নামের একটি মিউজিক ভিডিও আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে। শিল্পী ইনআমের গাওয়া এই গানটি এক বছর আগে এলএলএফ রেকর্ডস-এর ব্যানারে প্রকাশিত হয়েছিল, যার প্রযোজনা করেছিলেন জিশান আহমেদ। ভিডিওটিতে রাধিকাকে ইনআমের সঙ্গে একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে দেখা যায়। পুলিশ অনুমান করছে, এই ভিডিও দেখেই দীপকের ক্ষোভ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।

সামাজিক টিটকারি ও অসহনীয় অপমান
পুলিশের কাছে দীপক যাদব জানিয়েছেন, গ্রামের লোকেরা তাঁর মেয়েকে ঘিরে নানা কটাক্ষ করত। ‘মেয়ের রোজগারে বেঁচে থাকা’ নিয়ে প্রতিবেশীদের টিটকারি এবং সামাজিক অপমান নাকি তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। এই অপমানই তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। তিনি বারবার রাধিকাকে ইনস্টাগ্রাম থেকে রিল মুছে ফেলতে এবং অ্যাকাডেমি বন্ধ করে দিতে বললেও, রাধিকা তাতে কান দেননি।

ঘটনার দিন, বৃহস্পতিবার সকালে রাধিকা তাঁর মায়ের জন্মদিন উপলক্ষে রান্না করছিলেন। সেই সময়ই পেছন থেকে দীপক তাঁর রিভলভার বের করে গুলি চালান।

মায়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ও পুলিশের তদন্ত
রাধিকার মা মঞ্জু যাদব প্রথমে পুলিশকে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। পরে তিনি জানান, ঘটনার সময় জ্বরে ভুগছিলেন এবং নিজের ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকা ‘প্রেশার কুকার ফেটেছে’ ভেবে উঠে আসেন এবং পরে নিজের মেয়ের নিথর দেহ দেখতে পান।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে খুনে ব্যবহৃত রিভলভার বাজেয়াপ্ত করেছে। এছাড়াও, রক্তের দাগ, গুলি এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য। রাধিকার কাকা কুলদীপ যাদবের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত চালাচ্ছে।

জাতীয় স্তরে একাধিক প্রতিযোগিতায় রাজ্য ও দেশের প্রতিনিধিত্ব করা রাধিকা বহু পদকও জিতেছিলেন। তবে চোটের কারণে তাঁর টেনিস কেরিয়ারে বাধা আসে। এরপর থেকেই তিনি নিজের পরিচিতির নতুন পথ খুঁজছিলেন, যা হয়তো তার বাবা মেনে নিতে পারেননি। এই হত্যাকাণ্ড একদিকে যেমন এক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অকালমৃত্যু, তেমনি সামাজিক মূল্যবোধ এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার টানাপোড়েনের এক মর্মান্তিক দৃষ্টান্ত।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy