বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বরকাত গ্রেফতার, হতাশায় পরিবার!

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল বরকাতকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। এই আকস্মিক গ্রেফতারি শুধু তাঁর পরিবার নয়, শিক্ষামহল এবং রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম এএনআইকে ফোনে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় আসামি হিসেবে আবুল বরকাতকে গ্রেফতার করেছি। আমরা তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে তুলে দেব।” তবে এর বেশি বিস্তারিত তথ্য তিনি জানাননি।

অভিযোগ এবং পরিবারের দাবি
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালীন আনোনটেক্স নামক একটি কোম্পানির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগে আবুল বরকাতসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

তবে, আবুল বরকাতের মেয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অরুণী বরকাত, এই গ্রেফতারি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এএনআইকে তিনি জানান, “গত রাতে, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ২০/২৫ জন আমার বাবার শোবার ঘরে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তারা কোনও ওয়ারেন্টের কপি দেখায়নি।” তিনি আরও বলেন, “মিডিয়া রিপোর্ট থেকে আমরা মামলার বিষয়ে জানতে পেরেছি। কেউ আমাদের মামলার কথা বলেনি। কেউ তদন্ত করতে আসেনি। যদি তারা তদন্ত করতে আসত, আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করতাম।” অরুণী বরকাত জোর দিয়ে বলেন, “তার বিরুদ্ধে আনা মামলার বিরুদ্ধে আমরা আইনগতভাবে লড়াই করতে প্রস্তুত।”

বরকাতের পরিচিতি এবং পরিবারের হতাশা
আবুল বরকাত শুধু একজন অর্থনীতিবিদ নন, তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে। তাঁর মেয়ে অরুণী বরকাত হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমার বাবা ৪০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার মাও ছিলেন একজন শিক্ষক। আমি আমার বাবাকে শুধু মানুষের ভালোর জন্য কাজ করতে দেখেছি। কোনও তদন্ত ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করায় আমরা হতাশ।” তিনি বাংলাদেশ প্রশাসনের যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও দেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগ
আবুল বরকাতের গ্রেফতার এমন এক সময়ে ঘটল যখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনিতেই উত্তপ্ত। এর আগে গত ২৮ জুন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সংখ্যালঘু ঐক্য ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে এবং সারাদেশে বিক্ষোভ করে। বক্তারা দাবি করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই ধারা এখন হুমকির মুখে।

তাদের অভিযোগ, দেশি-বিদেশি উভয় সাম্প্রদায়িক শক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে তাদের বাড়িঘর লুটপাট, উপাসনালয় ভাঙচুর, মিথ্যা ধর্মীয় অভিযোগে হামলা এবং সংখ্যালঘু নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের। এই সংগঠনগুলি এই পরিস্থিতিকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করে সকল প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকে এই শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে আবুল বরকাতের মতো একজন পরিচিত ব্যক্তিত্বের গ্রেফতার একদিকে যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে মামলার প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তার পরিবারের দাবি এবং সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির উদ্বেগ, এই গ্রেফতারিকে ঘিরে বৃহত্তর বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy