গ্রিন টি-এর স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি এই পানীয়টি এখন স্বাস্থ্যসচেতন এবং ওজন কমাতে ইচ্ছুক প্রতিটি মানুষের খাদ্যতালিকায় অপরিহার্য স্থান করে নিয়েছে। প্রতিদিন সকালে এক কাপ গ্রিন টি পান করলে শুধু নানান শারীরিক অসুস্থতা দূরে থাকে না, ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি অসাধারণ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন চিনি ছাড়া মাত্র দুই থেকে চার কাপ গ্রিন টি পান করলেই ওজন কমানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চার পরেও যখন কাঙ্ক্ষিত ওজন কমানো সম্ভব হয় না, তখন গ্রিন টি ‘বুস্টার’ হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গ্রিন টি ঠিক কীভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে?
গ্রিন টি যেভাবে ওজন কমায়:
১. ফ্যাট বার্নিং এবং এনার্জি বুস্ট:
গ্রিন টি পানের ফলে ফ্যাট কোষসমূহের ‘মোবিলিটি’ বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ চর্বি কোষগুলো থেকে ফ্যাট সহজে বিমুক্ত হয়ে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। অন্যথায় এই ফ্যাট শরীরে জমা হয়েই থেকে যায়। গ্রিন টি-তে থাকা EGCG (Epigallocatechin Gallate) নামক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ‘নরপাইনফ্রাইন’ (Norepinephrine) নামক হরমোন বৃদ্ধি করে। এই হরমোন ফ্যাট কোষ থেকে ফ্যাটকে ভাঙতে এবং পুড়িয়ে ফেলতে সরাসরি সাহায্য করে।
২. মেটাবলিজম বৃদ্ধি:
শরীরের মেটাবলিজমের মাত্রা বৃদ্ধিতে গ্রিন টি-র অবদান অনস্বীকার্য। মেটাবলিজমের মাত্রা যত বেশি হবে, ওজন তত দ্রুত কমবে। যাদের মেটাবলিজম কম, তাদের ওজন কমাতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগে। গ্রিন টি শরীরকে ফ্যাট পোড়ানোর একটি শক্তিশালী মেশিনে রূপান্তরিত করে।
৩. অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ প্রতিরোধ:
গ্রিন টি আপনাকে বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে। অবাক হচ্ছেন? বিষয়টি আসলে খুবই সহজ। গ্রিন টি পানের ফলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ক্ষুধাভাব এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার চাহিদা কমে যায়। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে নির্দিষ্ট সময় পরপর ক্ষুধাভাব দেখা দেবে না, ফলে জাঙ্ক ফুড বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে আসে। এক কথায় বলা যায়, গ্রিন টি পরোক্ষভাবে আপনার খাওয়ার অভ্যাসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
প্রতিদিন কতটুকু গ্রিন টি পান করা উচিত?
ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন চিনি ছাড়া ৩-৪ কাপ গ্রিন টি পান করলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়। গ্রিন টি পানের ফলে ম্যাঙ্গানিজ, ক্রোমিয়াম এবং জিঙ্কের মতো মেটাবলিজম বৃদ্ধিকারী উপাদান শরীরে প্রবেশ করে।
তবে মনে রাখা জরুরি: শুধুমাত্র গ্রিন টি পান ওজন কমানোর জন্য যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে অবশ্যই সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গ্রিন টি একটি সহায়ক পানীয়, যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
গ্রিন টি পানের ক্ষেত্রে কিছু জরুরি তথ্য:
১. ক্যাফেইন সংবেদনশীলতা বা ইনসমনিয়া: যদি আপনার ক্যাফেইন পানে সমস্যা হয় অথবা ইনসমনিয়া (অনিদ্রা) থাকে, তবে প্রতিদিন ৩ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
২. গর্ভবতী অথবা গর্ভধারণের চেষ্টায়: অন্তঃসত্ত্বা অথবা গর্ভধারণের চেষ্টায় থাকলে প্রতিদিন ১ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা যাবে না। প্রয়োজনে গ্রিন টি পান করা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা উচিত, এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩. নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা: কিডনি জনিত সমস্যা, লিভারের সমস্যা এবং গ্লুকোমার মতো সমস্যা থাকলে গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
সঠিকভাবে গ্রিন টি পান করে এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলে আপনি সহজেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং সুস্থ থাকতে পারবেন।