আজ, ২৫শে মে, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব থাইরয়েড দিবস’। থাইরয়েড সম্পর্কে জ্ঞান, সচেতনতা এবং সতর্কতা বাড়ানোই এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য। এবারের প্রতিপাদ্য হলো ‘থাইরয়েড ও যোগাযোগ’। এই বিশেষ দিনে আসুন জেনে নিই, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বহু মানুষকে আক্রান্ত করা এই থাইরয়েড সমস্যার আদ্যোপান্ত এবং সুস্থ থাকতে কী করবেন আর কী করবেন না।
থাইরয়েড কী ও কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
থাইরয়েড আমাদের শরীরের এক বিশেষ গ্রন্থি, যা স্বরযন্ত্রের দু’পাশে প্রজাপতির মতো দেখতে একটি কাঠামোতে থাকে। এর প্রধান কাজ হলো শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন, যা থাইরয়েড হরমোন নামে পরিচিত, উৎপাদন করা। এই হরমোনগুলি শরীরের বিপাকীয় (মেটাবলিক) ফাংশনের জন্য দায়ী। শরীরের জন্য থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। এই নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম হরমোন উৎপাদিত হলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে তাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলা হয়। উভয় অবস্থাতেই শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে শুরু করে।
থাইরয়েডের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে পুরো শরীরে তার প্রভাব পড়ে। একজন থাইরয়েড রোগী বিষণ্নতা, ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, ক্লান্তি, শরীরের তাপমাত্রা কম বা বেশি অনুভব করা, চুল পড়া, দুর্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা এবং শক্তির অভাব অনুভব করতে পারেন।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে যা করবেন:
চিকিৎসার পাশাপাশি থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু বিষয় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি:
- নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা: থাইরয়েড আছে কিনা, তা জানতে নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা করানো আবশ্যক। চাইলে একটি গ্লাস বেসাল থার্মোমিটার দিয়ে ১০ মিনিটের তাপমাত্রা মেপে ঘরেও প্রাথমিক পরীক্ষা করতে পারেন।
- পর্যাপ্ত জল পান: থাইরয়েড রোগীদের উচিত পাতিত জল (distilled water) পান করা। এতে ক্লোরিন, ফ্লোরাইড ও ব্রোমিনের মাত্রা খুবই কম থাকে, যা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- সুষম খাদ্য: সেলেনিয়াম, টাইরোসিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার আপনার পাতে রাখুন। থাইরয়েড রোগীদের অবশ্যই ভিটামিন বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
- পর্যাপ্ত ঘুম: দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম থাইরয়েড রোগীর জন্য আবশ্যক। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে যা করবেন না:
কিছু খাবার ও অভ্যাস রয়েছে যা থাইরয়েড রোগীদের অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে:
- ধূমপান ও অ্যালকোহল: প্রথমেই ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এগুলো থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
- চর্বি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট (অতিরিক্ত): ফ্যাটবিহীন বা ট্রান্স-ফ্যাট খাবার থাইরয়েড রোগীদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
- চিনি ও ক্যাফেইন: চিনি ও ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকুন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন খেলে পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত টিএসএইচ (TSH) এর মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে।
- কিছু সবজি: ব্রোকোলি, বাঁধাকপি ও ফুলকপির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে না খাওয়াই ভালো। অনেকেই ওজন ঝরাতে এই ধরনের সবজি ডায়েটে রাখলেও, থাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
- প্যাকেটজাত ও প্রসেসড খাবার: প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া কমাতে হবে। এসব খাবারে লবণ, চিনি ও তেলের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ওজন দ্রুত বাড়াতে পারে এবং থাইরয়েডের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রসেসড খাবারও পরিহার করা উচিত।
- অতিরিক্ত ফাইবার: ফাইবারজাতীয় খাবার শরীরের জন্য খুবই ভালো এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। তবে থাইরয়েড হলে অত্যাধিক ফাইবারজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। আমেরিকান সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, ৫০ বছরের আগ পর্যন্ত সব প্রাপ্তবয়স্করা দৈনিক ২৫-৩৮ গ্রামের মধ্যে ফাইবার গ্রহণ করে। থাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- দুগ্ধজাত খাবার: বেশিরভাগ চিকিৎসকের মতে, দুগ্ধজাত খাবার শরীরে হরমোনের তারতম্য আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই দুধ, মাখন, চিজের মতো খাবার এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবসে, এই তথ্যগুলি আপনাকে থাইরয়েড সম্পর্কে সচেতন হতে এবং সুস্থ জীবন যাপনে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।