বর্তমানে কম বয়সী থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষের মধ্যেই পাইলসের সমস্যা alarming হারে বাড়ছে। অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে ‘হেমোরয়েড’ বলা হয়, এই রোগ মলদ্বারের আশেপাশে শিরা ফুলে যাওয়া এবং মাংসপিণ্ড জমা হওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে।
পাইলস কী এবং কেন হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইলস হলো মলদ্বারের ভেতরের ও বাইরের শিরাগুলো ফুলে যাওয়ার এক বিশেষ অবস্থা। অনেক সময় এই ফুলে যাওয়া স্থান থেকে রক্তপাতও হয়। ডা. রুদ্রজিৎ পাল, ঢাকুরিয়া আমরি হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, জানান যে পায়ুদ্বারের ভেতরে থাকা শিরাগুলো দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে ফুলে ওঠে। এরপর ওই স্থান শক্ত হয়ে ছিঁড়ে যায় এবং রক্তপাত শুরু হয়। এই সমস্যারই নাম পাইলস বা হেমোরয়েডস। রক্তপাতই এ অসুখের প্রধান ও অন্যতম লক্ষণ। মলত্যাগের সঙ্গেই রক্তপাত হতে থাকে, এবং অনেকের ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথাও অনুভূত হয়। তবে সবারই যে অসহ্য যন্ত্রণা হয় তা কিন্তু নয়। লক্ষণগুলো প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে দ্রুত সমাধান সম্ভব।
বিশেষত খুব গরম ও মসলাদার খাবার খেলে এই সমস্যা বাড়তে পারে। এছাড়াও, পারিবারিক ইতিহাসও পাইলসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ; পরিবারের কারও এই সমস্যা থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেও রোগটি স্থানান্তরিত হতে পারে।
পাইলসের সাধারণ লক্ষণসমূহ:
মলত্যাগের সময় অস্বাভাবিক ব্যথা বা জ্বালাপোড়া।
মলের সঙ্গে রক্ত পড়া।
মলদ্বারের চারপাশে ফোলা বা পিণ্ডভাব।
মলদ্বারের কাছে চুলকানি।
রক্তপাত।
পাইলস রোগের সমাধান ও প্রতিরোধের উপায়:
ডা. রুদ্রজিৎ পাল পাইলস প্রতিরোধের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন: পাইলসের মূল কারণ যেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্য, তাই প্রথমেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হবে। কনস্টিপেশন কমাতে পারলেই পাইলসের প্রকোপ কমবে।
২. ফাইবারযুক্ত খাবার: পাইলসের রোগীদের অবশ্যই ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। ফাইবার মল নরম করতে ও নিয়মিত মলত্যাগে সাহায্য করে, যা চাপ কমিয়ে শিরাগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
৩. পর্যাপ্ত জল পান: অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত জল পান করেন না, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করা অত্যাবশ্যক। শরীরকে আর্দ্র রাখতে পারলে অনেক রোগের ঝুঁকিও কমবে।
৪. শরীরচর্চার বিকল্প নেই: সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়াম করা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে অন্ত্রের চলন ঠিক থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা যায়। দিনে অন্তত ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।
৫. শিশুদের টয়লেট ট্রেনিং: ডা. পালের মতে, অনেক সময় টয়লেট ট্রেনিং ঠিকমতো না হওয়ার কারণে শিশুরা অনিয়মিত মলত্যাগ করে। এতে ছোটবেলা থেকেই তারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা শুরু করে এবং অল্প বয়সেই পাইলসের রোগী হয়ে যায়। তাই শিশুদের সঠিক টয়লেট ট্রেনিং দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কখন প্রয়োজন চিকিৎসকের হস্তক্ষেপ?
যদি এই নিয়মগুলো মেনে চলার পরও পাইলসের সমস্যা না কমে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই অবস্থায় ল্যাক্সেটিভসহ বেশ কিছু ওষুধ দারুণ কার্যকরী বলে জানান ডা. রুদ্রজিৎ পাল।
তবে, যদি রোগ আরও গভীরে চলে যায় এবং ওষুধেও কাজ না হয়, তখন সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমান উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই অপারেশন অত্যন্ত নিরাপদভাবে করা হয়, এবং সার্জারির পর রোগী খুব সহজেই সুস্থ হয়ে ওঠেন।
সচেতনতা এবং সঠিক জীবনযাপনই পাইলস প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি।