কলা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, তা আমরা কমবেশি সবাই জানি। এতে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে, শুধু কলাই নয়, কলার মোচাও (Banana Blossom) স্বাস্থ্যের জন্য এক অসাধারণ সম্পদ। দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু এই মোচার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে অনেকে অবগত নন। কলার মোচায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি এবং প্রচুর ফাইবার। এছাড়াও, এতে ভিটামিন ই ও প্রোটিন থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক কলার মোচা খেলে কী কী স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়:
১. পিরিয়ডের ব্যথা উপশম ও স্ত্রীরোগে কার্যকারিতা:
নারীদের জন্য কলার মোচা বিশেষভাবে উপকারী। এটি শরীরে প্রজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি ঘটিয়ে পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপা প্রতিরোধ করতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) এর ক্ষেত্রেও কলার মোচা খুব কার্যকর বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
২. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ও হতাশা হ্রাস:
কলার মোচায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম আপনার মুড ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়াম উদ্বেগ ও হতাশা হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং মুড সুইং নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। এটি খেলে প্রাকৃতিকভাবেই হতাশা কাটাতে সাহায্য পাওয়া যায়।
৩. ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে:
কলার মোচা একটি লো গ্লাইসেমিক সূচক (GI) খাবার, যার অর্থ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও, এটি হৃদরোগের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট: ফ্রি র্যাডিকেল বিরোধী:
কলার মোচায় উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে ফ্রি র্যাডিকালের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং অক্সিডেটিভ ড্যামেজ রোধ করে। এর ফলে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। এটি কোষের ক্ষতি রোধ করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
৫. ওজন কমাতে সহায়ক:
যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য কলার মোচা এক দারুণ বিকল্প। গবেষণা অনুযায়ী, কলার মোচায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার পাওয়া যায়। এটি খেলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে এবং অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুধা কমে যায়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
৬. রক্তস্বল্পতা দূর করে ও পুষ্টির ভাণ্ডার:
কলার মোচার মধ্যে আয়রনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। এটি হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরে রক্তের অভাব (অ্যানিমিয়া) দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। এছাড়াও, এতে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন-ই এর মতো শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে।
৭. সংক্রমণ প্রতিরোধক:
সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কলার মোচার জুড়ি মেলা ভার। এতে থাকা উপাদান জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার শক্তি যোগায় এবং প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।
সুতরাং, শুধু কলাই নয়, কলার মোচাকেও আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এই অতুলনীয় স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলো উপভোগ করুন।
