শিশু থেকে বয়স্ক সবারই পছন্দের খাবার ডিম। কোনো কোনো ডিমের খোসা সাদা কোনোটার লালচে হয়। আবার কুসুমের ক্ষেত্রেও কোনোটা হলুদ কোনোটা কমলা দেখা যায়। ডিমের রঙের মতো কোন রঙের কুসুম স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী তা নিয়ে অনেকেই দ্বন্দ্বে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এর গবেষকদের মতে, একটি ৫০ গ্রাম ওজনের ডিমে ৭২ ক্যালরি ও ৪ দশমিক ৭৫ গ্রাম ফ্যাট ( যার মধ্যে দ্রবণীয় মাত্র ১ দশমিক ৫ গ্রাম) থাকে। সাদা ও লাল ডিমে এই পুষ্টিগুণের পরিমাণ প্রায় এক। এ কারণে লাল বা সাদা যাই হোক না কেন দু’ধরনের ডিমের খাদ্যগুণ বা পুষ্টিগুণ প্রায় সমান। বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা, কুসুমের রঙ যত গাঢ় হয় ওই ডিম তত স্বাস্থ্যকর। তবে ইউএসডিএ-র গবেষকদের মতে, কুসুমের রঙ নির্ভর করে মুলত মুরগির খাবারের ওপর। আর ডিমের কুসুমের রঙ কমলা হয় ক্যারোটিনয়েড নামের এক রকম রাসায়নিকের প্রভাবে। মুরগি খোলা জায়গায় যত বেশি ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পাবে, তার ডিম ততই গাঢ় রঙের হবে। বেশ কিছু খামারে ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া হয় মুরগিকে। যার প্রভাবে ওই সব মুরগির ডিমের কুসুমের রঙ কমলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের মতে, দু’টি কারণে কুসুমের রঙ গাঢ় হতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো- যদি মুরগিটি খোলা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায় এবং প্রাকৃতিক খাবার থেকে পুষ্টি পায় তাহলে, দ্বিতীয়টি হলো যদি মুরগিটিকে বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ানো হয় তাহলেও এর ডিম গাঢ় হতে পারে। গবেষকরা বলছেন, খামারের যে কোনও মুরগির চেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টিকর খাবার খুঁজে খাওয়া মুরগির ডিমে ভিটামিন ই, ভিটামিন এ আর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। আর রঙও গাঢ় হয়। কুসুমের রঙ যাতে গাঢ় হলুদ বা কমলা হয়, এজন্য অনেক খামারের মালিক মুরগিকে ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ খাবার যেমন- লাল ক্যাপসিকাম খাওয়ান। কিন্তু তাতে কুসুমের খাদ্যগুণ বা পুষ্টিগুণে খুব একটা পার্থক্য হয় না।

রোদে পোড়া ত্বকের নিরাময় হিসেবে অ্যালোভেরা সুপরিচিত। এর আঠালো জেল গরম ত্বকে এক ঠান্ডা ও আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। কিন্তু এই সাধারণ দেখতে উদ্ভিদটির রয়েছে আরও অনেক লুকানো শক্তি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, অ্যালোভেরার স্বাস্থ্যকর সুবিধাগুলো থেকে লাভবান হওয়ার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো এর জুস পান করা। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অ্যালোভেরার জুস পান করলে যে ৫টি অসাধারণ উপকারিতা পেতে পারেন, তা জেনে নিন:

১. প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধি: দিনের শুরু হোক সতেজভাবে
অ্যালোভেরার রসে থাকা সমৃদ্ধ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলো আপনাকে দিনটি সঠিকভাবে শুরু করার জন্য এক প্রাকৃতিক শক্তি যোগান দেয়। এর ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য সঠিক শারীরিক হাইড্রেশন বজায় রাখতেও সহায়তা করে, যা সামগ্রিক শক্তির মাত্রা এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী। এটি আপনাকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ ও সক্রিয় থাকতে সাহায্য করবে।

২. হজমে সহায়তা: সুস্থ পরিপাকতন্ত্রের চাবিকাঠি
খালি পেটে অ্যালোভেরার রস পান করলে পাচনতন্ত্র ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে। এই উদ্ভিদে পাওয়া বিশেষ এনজাইমগুলো কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। সুস্থ পরিপাকতন্ত্রকে সহায়তা করার পাশাপাশি, অ্যালোভেরার রস অ্যাসিড রিফ্লাক্স, পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সাধারণ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলো কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

৩. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি: ভেতর থেকে উজ্জ্বল ত্বক
আমরা জানি যে অ্যালোভেরা জেল বাহ্যিকভাবে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরার রস খাওয়ার ফলে ত্বকের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নিয়মিত অ্যালোভেরার রস পান বলিরেখা কমাতে এবং ত্বকের নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে। এর শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলীর কারণে এটি ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের ব্যাধি চিকিৎসাতেও সহায়তা করতে পারে, ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ ও উজ্জ্বল করে তোলে।

৪. দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য: এক নতুন সমাধান
অ্যালোভেরার জুস মুখের স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো সমাধানেও কার্যকরী হতে পারে। এর ইমিউনোমোডুলেটরি, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলীর কারণে অ্যালোভেরা ওরাল লাইকেন প্ল্যানাস, ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস এবং অন্যান্য দাঁতের সমস্যার চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে। এছাড়াও, অ্যালোভেরার রস দিয়ে মাড়ির জ্বালা কমানো সম্ভব, যা মুখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।

৫. প্রদাহ কমায়: শরীরের ভেতরের প্রদাহে প্রাকৃতিক নিরাময়
অ্যালোভেরার শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। ব্র্যাডিকিনেজ, সি-গ্লুকোসিল ক্রোমোন এবং স্যালিসিলিক অ্যাসিডের মতো প্রদাহ-বিরোধী পদার্থগুলো শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী অ্যাসিডের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যালোভেরা আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগের হালকা ক্ষেত্রে চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর। এটি ব্রণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসাতেও সহায়তা করে, শরীরের ভেতর ও বাইরের প্রদাহ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস অ্যালোভেরার জুস আপনার শরীরকে একাধিক উপকারিতা দিতে পারে এবং আপনাকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy