ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে অন্তরঙ্গ এবং প্রাচীনতম মাধ্যমগুলোর একটি হলো চুম্বন। এই স্পর্শ কেবল সম্পর্কের গভীরতাই বাড়ায় না, এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও ফেলে এক গভীর ইতিবাচক প্রভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুম্বনের ফলে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়, যার ফলে ব্যক্তি আনন্দিত অনুভব করেন এবং মন ভালো থাকে। কিন্তু সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর গবেষণা চুম্বনের এমন কিছু উপকারিতার কথা বলছে, যা আমাদের অবাক করে দেবে।
জার্মান গবেষণা: চুম্বনের জাদুকরী ক্ষমতা!
জার্মানির একদল ফিজিশিয়ান ও বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এক অবিশ্বাস্য তথ্য: নিয়মিত চুম্বন একজন পুরুষের আয়ু অন্তত ৫ বছর বাড়িয়ে দিতে পারে! ১৯৮০ সালে জার্মানিতে পরিচালিত দুই বছর ব্যাপী এক মনস্তাত্ত্বিক সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা এই চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
এই সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন কাজে যাওয়ার আগে যে স্বামীরা তাঁদের স্ত্রীকে চুম্বন করে যান, তাঁদের বয়স গড়ে ৫ বছর বেড়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, গবেষণা আরও বলছে যে, অফিসে যাওয়ার আগে যে স্বামী নিজের স্ত্রীকে ‘গুডবাই কিস’ করে যান, তাঁরা অন্যদের তুলনায় ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেশি অর্থ উপার্জন করেন।
জার্মানির ১১০ জন শীর্ষ শিল্পপতি ম্যানেজার এই সমীক্ষায় অংশ নেন। তাঁদের প্রশ্নোত্তর নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮৭ শতাংশ কর্মচারীই অফিস যাওয়ার আগে স্ত্রীকে চুম্বন করে বের হন। এই অধ্যয়নের প্রধান গবেষক ড. আর্থার সাজবোরের মতে, চুম্বনের ফলে মানসিক প্রশান্তি বেড়ে যাওয়ায় দিনটি ইতিবাচকভাবে শুরু হয়। আর যারা চুম্বন করেন না, তারা আত্মবিশ্বাসের অভাব নিয়েই ঘর থেকে বের হন, যা কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।
দীর্ঘায়ু ছাড়াও চুম্বনের আরও কিছু বিস্ময়কর উপকারিতা:
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দীর্ঘ চুম্বনের আরও বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে:
হৃদপিণ্ড ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: দীর্ঘ চুম্বনে হৃদগতি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য: চুম্বনের সময় মুখের পেশীগুলো সক্রিয় হয় এবং রক্ত চলাচল বাড়ে। এর ফলে বলিরেখা দূর হতে পারে।
অ্যালার্জি উপশম: চুম্বন রক্তে আইজিই (IgE) অ্যান্টিবডির বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। এই অ্যান্টিবডিগুলো ‘হিস্টামিন’ নিঃসৃত করে, যা হাঁচি ও চোখে জল আসার মতো অ্যালার্জির সমস্যার জন্য দায়ী।
ক্যালোরি বার্ন: একটি দীর্ঘ চুম্বন ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যালোরি বার্ন করতে পারে। দিনে যদি ৩ বার চুম্বন করা হয়, তবে তা ১.৩৫ কেজি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে বলে কিছু গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি: গবেষকদের মতে, চুম্বনের সময় ফুসফুস স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি কাজ করে, যা প্রতি মিনিটে প্রায় ৬ বার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমতুল্য। এটি ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
সুতরাং, চুম্বন কেবল ভালোবাসার প্রতীক নয়, এটি একটি শক্তিশালী থেরাপিও বটে। প্রতিদিনের জীবনে এই ছোট্ট অভ্যাসটি আপনাকে দীর্ঘ, সুখী এবং স্বাস্থ্যকর জীবন উপহার দিতে পারে।