ফুড পয়জনিং, শুধু বাসি খাবার নয়, আপনার প্রিয় খাবারও হতে পারে বিপদের কারণ! চিনে নিন জরুরি লক্ষণগুলো

অসতর্ক মুহূর্তে যেকোনো খাবার থেকেই দেখা দিতে পারে খাদ্যে বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিংয়ের মতো অস্বস্তিকর এবং বেদনাদায়ক সমস্যা। শুধু পুরনো বা বাসি খাবার নয়, অনেক সময় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকেও এই শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। মুরগির মাংস, দুধ, পনির, ডিম, এমনকি সতেজ সবজি ও ফলও যদি সঠিকভাবে সংরক্ষণ বা প্রস্তুত না হয়, তবে তা থেকে ফুড পয়জনিং হতে পারে। যেহেতু একেকজনের ক্ষেত্রে এই সমস্যার লক্ষণগুলো ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়, তাই কোন কোন লক্ষণ বেশিরভাগ সময়ে প্রকাশ পায়, তা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

ফুড পয়জনিংয়ের প্রাথমিক ও সাধারণ লক্ষণসমূহ:

১. অতিরিক্ত ঘাম হওয়া:
ফুড পয়জনিংয়ের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে অনেকে সরাসরি পেটের সমস্যা আশা করেন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, এর প্রথম লক্ষণ হতে পারে হুট করে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া। যদি বিনা কারণে হঠাৎ করে শারীরিক অস্বস্তির সাথে অতিরিক্ত ঘাম হয়, তবে বুঝতে হবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।

২. পেটে গ্যাস ও ফোলাভাব:
মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, ফুড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে পেটে ব্যথাভাব এবং পেট ফুলে যাওয়ার সমস্যাটি প্রায়শই দেখা দেয়। খাদ্যজনিত ও হজমজনিত সমস্যার কারণে পেটে গ্যাস তৈরি হয়, যা পেটে চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্যথা ঘটায়।

৩. জ্বরভাব:
লিস্টেরিয়া (Listeria) ও ক্যাম্পাইলোব্যাকটার (Campylobacter) নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে ফুড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে জ্বরও চলে আসতে পারে। যদিও খাদ্যে বিষক্রিয়া মূলত হজমজনিত সমস্যা থেকে হয়, কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর আক্রমণের ফলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা জ্বর আকারে প্রকাশ পায়। সাধারণত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এই জ্বর ভালো হয়ে যায়। তবে যদি ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরও জ্বর না কমে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।

৪. মাথা ঘোরানো ও বমিভাব:
ফুড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রে মাথা ঘোরানো এবং বমিভাব দেখা দেওয়া একটি অত্যন্ত প্রাথমিক ও সাধারণ লক্ষণ। তবে এই দুটি লক্ষণ ফুড পয়জনিংয়ের কোন পর্যায়ে প্রকাশ পাবে, তা নির্ভর করে কোন ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আপনি আক্রান্ত হয়েছেন তার ওপর। যেমন, লিস্টেরিয়া (Listeria) নামক ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হওয়ার প্রায় ৭০ দিন পরেও লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে, যা দীর্ঘসূত্রতার ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, স্যালমোনেলা (Salmonella) ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে ১২-৭২ ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা তুলনামূলক দ্রুত।

৫. ডায়রিয়া:
ফুড পয়জনিংয়ের সবচেয়ে সাধারণ এবং পরিচিত লক্ষণ হলো ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা। খাবার হজমে সমস্যা এবং পেটে খাবারের বিষক্রিয়ার ফলে এটি সহজেই দেখা দেয়। যদিও এই সমস্যাটি প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি পরিলক্ষিত হয়।

৬. জলশূন্যতা (Dehydration):
অতিরিক্ত ঘাম এবং ডায়রিয়ার সমস্যার কারণে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল বেরিয়ে যায়, ফলে শরীরে জলশূন্যতা দেখা দেয়। এই সময়ে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রাও একেবারেই কমে যায়। তাই খাদ্যে বিষক্রিয়ার সময় বারবার জল পানের ওপর জোর দেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনে ইলেক্ট্রোলাইট সলিউশন গ্রহণ করা উচিত।

খাদ্যে বিষক্রিয়া একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে। উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলির মধ্যে কোনোটি প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। সচেতনতা এবং দ্রুত চিকিৎসা অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy