বেঙ্গালুরুর বাগানে AI ড্রোন, সেন্সর ও ড্রিপ সেচ!- রেকর্ড পরিমান আম চাষ করে চমকে দিলেন যুবক

বেঙ্গালুরুর এক বিশাল আমবাগান এখন ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রায় ২৫ হাজার আম গাছ নিয়ে গঠিত এই বাগানটি ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদের পদ্ধতি থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবস্থাপনার পথে হেঁটেছে, যা দেশের কৃষি ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এই অভিনব প্রকল্পের মূল কারিগর বিটস পিলানির প্রাক্তন ছাত্র এবং উইপ্রো, নকিয়া, মেক মাই ট্রিপ-এর মতো সংস্থায় কাজ করা প্রযুক্তি পেশাজীবী থেকে কৃষক হয়ে ওঠা সুরজ পানিগ্রাহী

প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে নতুন সমাধান: সুরজ পানিগ্রাহী বিশ্বাস করেন যে, যারা কৃষিকে শুধুমাত্র প্রথাগত পন্থায় দেখতে অভ্যস্ত, তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও আরও কার্যকর সমাধান রয়েছে। তাঁর খামারে সেই বিশ্বাসেরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। এখানে প্রতি একরে ১৪৫০টি আম গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি ঘন। এই বিশেষ পদ্ধতিতে চাষের ফলে উৎপাদন প্রায় ৭ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে বাগানটি থেকে ৪০ টনেরও বেশি আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এক অসাধারণ সাফল্য।

প্রযুক্তির মেলবন্ধন কৃষিক্ষেত্রে: সুরজের এই খামারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার চমকে দেওয়ার মতো। এখানে ব্যবহৃত হচ্ছে:

  • এআই চালিত ড্রোন: এই ড্রোনগুলি গাছের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করতে পারে।
  • ড্রিপ সেচ পদ্ধতি: এই উন্নত সেচ ব্যবস্থা জলের ব্যবহার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনে, যা জল সংরক্ষণে অত্যন্ত কার্যকর।
  • সোলার ওয়েদার স্টেশন ও মাইক্রোক্লাইমেট সেন্সর: এগুলি জমির অবস্থা এবং স্থানীয় আবহাওয়ার সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করে, যার ফলে গাছের পরিচর্যা আরও সুনির্দিষ্ট হয়।

খামারের প্রযুক্তি প্রধান প্রশান্ত পাতালয় জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিটি গাছের জন্য আলাদা পরিচর্যা নির্ধারণ করি। এই সঠিক পদ্ধতির ফলে ফলের মান ও উৎপাদন দুই-ই বেড়েছে।”

আন্তর্জাতিক মানের হাপুস আম উৎপাদনের লক্ষ্য: সুরজের লক্ষ্য শুধু উৎপাদন বাড়ানো নয়, বরং ভারতীয় হাপুস আমকে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য মানে পৌঁছে দেওয়া। তিনি বলেন, “আমরা চাই ভারতের আম হোক ইউরোপের সেরা ওয়াইনের মতো ব্র্যান্ড।”

এই প্রকল্পে প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে নিম তেল এবং মৌমাছি দিয়ে পরাগায়ন ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ছে এবং ফলের গুণগত মানও অক্ষুণ্ণ থাকছে।

সুরজ পানিগ্রাহী বলেন, “কৃষির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শুধু কী ফলানো হচ্ছে তার ওপর নয়— বরং কীভাবে ফলানো হচ্ছে, তার ওপর।”

প্রযুক্তি ও কৃষির এই সফল সমন্বয় ভারতীয় কৃষকদের জন্য নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে এবং ভবিষ্যতের কৃষিব্যবস্থার এক উজ্জ্বল চিত্র তুলে ধরছে। এই ধরনের উদ্যোগ দেশের কৃষিক্ষেত্রে এক নীরব বিপ্লব ঘটাতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy