বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে ঘিরে বিতর্কের রেশ কাটছে না। বোলপুর থানার আইসি লিটন দাসকে ফোনে গালিগালাজ এবং মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় পুলিশ অনুব্রতকে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। পুলিশের এই দায়সারা রিপোর্টে রীতিমতো বিরক্ত কমিশন।
কিছুদিন আগে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়, যেখানে অনুব্রত মণ্ডলকে বোলপুর থানার আইসি লিটন দাসকে ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যায়। এমনকি, আইসি-র স্ত্রী ও মা সম্পর্কেও আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে। যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা bangla.aajtak.in যাচাই করেনি, তবে ঘটনাটি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের পক্ষ থেকেও অনুব্রতকে শোকজ করা হয়েছিল। সেই সময় অনুব্রত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, “আমি নানা রকম ওষুধ খাই। শুনলাম, আমাদের এক তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে পুলিশ মারধর করেছে। নিরীহ ছেলে। ওটা শুনেই আমার মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। ওই পুলিশও আমাকে খারাপ কথা বলেছে।”
জাতীয় মহিলা কমিশনের পদক্ষেপ ও পুলিশের রিপোর্ট
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে জাতীয় মহিলা কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে পুলিশের কাছে একটি অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট (ATR) চেয়েছিল। বীরভূম পুলিশের জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, “অনুব্রত মণ্ডল তদন্তে ভীষণ সহযোগিতা করছেন। এখনও তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়েনি।” রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, অভিযোগকারীর দুটি মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও আসেনি। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরই অভিযুক্তের মোবাইল ফোন নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে পুলিশের এই রিপোর্ট একেবারেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি জাতীয় মহিলা কমিশনকে। কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার এই প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, “এই যে দায়সারা উত্তর, অনুব্রত খুব কোঅপারেটিভ, সব উত্তর সন্তোষজনক, ফরেনসিকে দোষ ধরা পড়লে পুলিশ পদক্ষেপ করবে – এই সব রিপোর্টে কমিশন মোটেই সন্তুষ্ট নয়। আমরা মুখে বলি না, কাজেই করি। মহিলাদের উপর অত্যাচার হলে যদি কোনও মহিলা চুপ করে সহ্যও করেন, কমিশন ছাড়বে না।”
অনুব্রত মণ্ডল সম্প্রতি পুলিশকে হুমকি বিতর্কের পর প্রথমবার দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে তিনি দলীয় নেতৃত্বের কাছে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলেন। তবে, জাতীয় মহিলা কমিশনের অসন্তোষ এবং পুলিশের ‘ক্লিনচিট’ এই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিল। অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কমিশন কি এবার আরও কঠোর পদক্ষেপ করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।