বাংলাদেশের বিতর্কিত গায়ক মইনুল আহসান নোবেল আবারও সংবাদ শিরোনামে। এক সময় সুরের জাদুতে দুই বাংলার শ্রোতাদের মন জয় করেছিলেন তিনি, ‘সারেগামাপা’-এর মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি ছিল মুগ্ধতা ছড়ানো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাঁর গানের চেয়ে ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে। এবার অপহরণ ও যৌন হেনস্তার অভিযোগে কারাবাসের পর আদালতের এক নজিরবিহীন নির্দেশে নতুন মোড় নিল তাঁর ঘটনাবহুল জীবন। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অভিযোগকারী মহিলাকেই বিয়ে করতে হবে নোবেলকে। এই নির্দেশ নতুন করে জন্ম দিয়েছে আলোচনা ও বিতর্কের।
নোবেলের নাম শুনলেই এখন সম্পর্ক, বিয়ে, বিচ্ছেদ, মাদকাসক্তি এবং লাগামহীন বিতর্কিত মন্তব্যের এক দীর্ঘ তালিকা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন এতটাই তীব্র হয়েছে যে, বহু শ্রোতা তাঁর গান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। মাস কয়েক আগে নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সব ভুল শুধরে নেওয়ার। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত মে মাসে, এক পরিচিত মহিলার অপহরণ ও যৌন হেনস্তার অভিযোগে ডেমরা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযোগকারী মহিলা গুরুতর অভিযোগ এনেছিলেন নোবেলের বিরুদ্ধে। যদিও গ্রেফতার হওয়ার পরপরই নোবেল ওই মহিলাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেন। শোনা যায়, ওই মহিলা ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু সেদিন আদালতে তিনি বিয়ে সংক্রান্ত কোনো কাবিননামা জমা দিতে পারেননি। গায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত নভেম্বরে নিজের স্টুডিও দেখানোর নাম করে ওই মহিলাকে ডেকে নিয়ে যান নোবেল। এরপর তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হয়। শুধু তাই নয়, তিনি পালানোর চেষ্টা করলে তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ডেমরা থানার পুলিশ আদালতকে লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, ২০১৮ সাল থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে নোবেলের সঙ্গে অভিযোগকারী মহিলার পরিচয় হয়। সে সময় তিনি ঢাকার একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত বছর ১২ নভেম্বর ডেমরা এলাকার নিজের স্টুডিও দেখানোর জন্য তাকে ডেকে নেন নোবেল। রাত ৮টার পর তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে তাঁর মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন শিল্পী এবং পরে তা ভেঙেও ফেলেন।
নোবেলের বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ অভিযোগ ওঠে – এরপর ধর্ষণ করে সেই ভিডিও রেকর্ডিং করা হয় এবং সেটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এরপর সাত মাস ওই মহিলাকে জোর করে নিজের কাছে আটকে রাখেন নোবেল। ততদিনে নির্যাতনের সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। পরে নির্যাতিতার বাবা-মা গিয়ে মেয়েকে নোবেলের বাড়ি থেকে উদ্ধার করেন। গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের হয়।
বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোবেলের আইনজীবী জসীমউদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগকারিণীও উপস্থিত ছিলেন। অভিযুক্ত নোবেলের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে বিয়ে করার অনুমতি চাওয়া হয়। উভয় পক্ষের সম্মতিতেই বিয়ের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) নাজমিন আখতার অভিযোগকারিণীকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন নোবেলকে।
উল্লেখ্য, এর আগেও রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর পোস্ট করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন নোবেল, যার জেরে ত্রিপুরা পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। শিল্পী নিজে স্বীকার না করলেও, শোনা যায় তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন। বহু অশান্তি ও ঝামেলার পর তাঁর তৃতীয় স্ত্রী মেহরুবা সালসাবিল মাহমুদের সঙ্গেও বিচ্ছেদ হয়। সালসাবিল নোবেলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এখন দেখার বিষয়, আদালতের এই নির্দেশ নোবেলের বিতর্কের জীবনে নতুন কোনো মোড় আনে, নাকি এটি শুধুই তাঁর ঘটনাবহুল অধ্যায়ের আরও একটি পাতা মাত্র।