মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতিতে এবার এক নতুন বিস্ফোরক দাবি সামনে আনলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন যে, ইরান আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। নেতানিয়াহুর এই দাবি বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে এবং গণমাধ্যমগুলোতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
নেতানিয়াহু তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইরান ট্রাম্পকে শত্রু নম্বর এক হিসেবে দেখছে এবং তাঁকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছে।” নেতানিয়াহুর মতে, ট্রাম্পের ২০১৮ সালে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসা এবং ইরানের শীর্ষ কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যাই তাঁকে ইরানের শীর্ষ টার্গেটে পরিণত করে। এই দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ নজির স্থাপন করবে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতানিয়াহু বলেন, ট্রাম্প খুব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইরান কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না। নেতানিয়াহুর দাবি, ইরান এখন ইউরেনিয়াম মজুদ করছে এবং তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারও দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
তিনি বলেন, “ইরান বছরে ৩,৬০০ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে, তিন বছরের মধ্যে তাদের ভাণ্ডার দাঁড়াবে ১০,০০০-এ এবং ২৬ বছরের মধ্যে ২০,০০০-এ।” এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের মতো একটি ছোট দেশ এটি সহ্য করতে পারে না বলেও তিনি সতর্ক করেন।
সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু আরও চাঞ্চল্যকর দাবি করে বলেন, ইরানের দিক থেকে তাঁর বাড়ির শোবার ঘরের জানালার দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। এতে বোঝা যায়, ইরান তাঁকেও ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেকে ট্রাম্পের ‘জুনিয়র পার্টনার’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যিনি ইরানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বকে রক্ষা করছেন।
নেতানিয়াহু ইসরায়েলি ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-কে ‘ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি দাবি করেন, এই আক্রমণে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে’ এবং ভবিষ্যতের আলোচনার ক্ষেত্রেও একটি কড়া বার্তা পৌঁছে গেছে।
ইরান ইসরায়েলের শহরগুলিকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লেও, অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র আটকে দেওয়া হয়েছে বলে নেতানিয়াহু দাবি করেন। তিনি বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে শুধু ইসরায়েলের সুরক্ষা নয়, গোটা বিশ্বের স্বার্থেই যা কিছু প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত তাঁর দেশ।
সাক্ষাৎকারের শেষদিকে ইরানি জনগণের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আপনারা গত ৫০ বছর ধরে ইসলামী শাসনের অধীনে রয়েছেন, যারা বারবার ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দিয়ে এসেছে।”
নেতানিয়াহুর এই দাবিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে আরও এক নতুন দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে ব্যক্তিগত টার্গেটিং এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি সামনে আসছে। বিশ্ব এখন এই পরিস্থিতির পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে।