২০২৭ এএফসি এশিয়ান কাপের ফাইনাল রাউন্ডে যোগ্যতা অর্জনের প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ৪ জুন, ২০২৫ থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক গুরুত্বপূর্ণ ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মাঠে নামবে ভারতীয় ফুটবল দল। থামাসাত স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলা এই ম্যাচের পর আগামী ১০ই জুন হংকংয়ের বিপক্ষে ভারতের পরবর্তী ম্যাচ।
বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ১২৭তম স্থানে রয়েছে, যেখানে থাইল্যান্ড ৯৯ নম্বরে। র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও ভারতীয় দল প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখেনি। কলকাতায় প্রায় দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি শিবির শেষে ২৯শে মে থাইল্যান্ড রওনা দিয়েছে ব্লু টাইগার্সরা। শিবিরে সকালের জিম সেশন ও বিকেলের মাঠের অনুশীলনের পাশাপাশি দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচেও জয় এসেছে ভারতের পক্ষে।
এই ম্যাচে কিছু খেলোয়াড় আছেন যারা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে ম্যাচের রঙ পাল্টে দিতে পারেন। নিচে তুলে ধরা হলো পাঁচজন সম্ভাব্য পারফর্মার, যারা থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারেন:
১. সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri): ভারতীয় ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী এবারও জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান ভরসা। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে তার প্রত্যাবর্তন ম্যাচেই গোল করে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন। বয়সের ভার যেন তাকে স্পর্শই করতে পারেনি। তার খেলার বুদ্ধিমত্তা, পজিশনিং এবং গোল করার সামর্থ্য ভারতকে অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করেছে বহুবার। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে তার উপস্থিতি প্রতিপক্ষের উপর মানসিক চাপ তৈরি করবে। শুরু থেকেই খেলুক বা বেঞ্চ থেকে নেমে আসুক, তিনি ম্যাচের মোড় ঘোরাতে পারেন একটি গোল কিংবা অসাধারণ একটি অ্যাসিস্টে।
২. রাহুল ভেকে (Rahul Bheke): ভারতের ডিফেন্স লাইনের অন্যতম শক্তি রাহুল ভেকে। রাইট ব্যাক এবং সেন্টার ব্যাক উভয় ভূমিকাতেই সমান দক্ষ এই ফুটবলার তার অভিজ্ঞতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কেড়েছেন। তার নিখুঁত পাসিং, প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেওয়া এবং গোল মুখে উঠে এসে হেডারের মাধ্যমে গোল করার দক্ষতা তাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে। থাইল্যান্ডের মতো ট্যাকটিক্যাল দলকে সামলাতে হলে রাহুলের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের প্রয়োজন।
৩. শুভাশীষ বোস (Subhashis Bose): বাম দিকের রক্ষণে ভারতের নির্ভরযোগ্য নাম শুভাশীষ বোস। তিনি যেমন রক্ষণে দায়িত্বশীল, তেমনি আক্রমণে ওভারল্যাপ করে উঠে যান এবং ক্রসের মাধ্যমে গোলের সুযোগ তৈরি করেন। তার ধারাবাহিক ক্লিয়ারেন্স, ইন্টারসেপশন এবং কখনো কখনো গোল করার প্রবণতা এই ম্যাচে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের উইং থেকে আসা আক্রমণ ঠেকাতে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।
৪. ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ (Brandon Fernandes): ভারতের অন্যতম সৃজনশীল মিডফিল্ডার ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ। ফ্রি-কিক, কর্নার কিক কিংবা খোলা খেলার মধ্য দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করতে তার জুড়ি মেলা ভার। তার পাসিং রেঞ্জ, দৃষ্টিশক্তি এবং দুর্দান্ত সেট-পিস ডেলিভারি ভারতের আক্রমণে বাড়তি ধার আনবে। বিশেষ করে ম্যাচে যদি ওপেন প্লে থেকে সুযোগ কম আসে, সেক্ষেত্রে তার সেট-পিসগুলো হতে পারে ম্যাচ নির্ধারণকারী।
৫. আপুইয়া রালতে (Apuia Ralte): মিডফিল্ডে রক্ষণ ও আক্রমণের মাঝামাঝি অবস্থানে খেলেন আপুইয়া। তিনি প্রতিপক্ষের আক্রমণ থামিয়ে বল নিজেদের দখলে আনা এবং সঠিকভাবে তা ফরোয়ার্ডদের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় অত্যন্ত দক্ষ। তার পজিশনিং, ইন্টারসেপশন ও ট্যাকলিং-এর মাধ্যমে তিনি থাইল্যান্ডের পাসিং ফুটবলকে ব্যাহত করতে পারেন। তার উপস্থিতিতে ভারতীয় মিডফিল্ড আরও শক্তিশালী ও সজাগ থাকবে।
এই ম্যাচ ভারতের জন্য শুধু প্রীতি ম্যাচ নয়, বরং একটি বড় প্রস্তুতি, একটি মানসিক পরীক্ষাও। সুনীল ছেত্রীদের নেতৃত্বে ব্লু টাইগার্স কি পারবে থাইল্যান্ডের মাটি থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফিরতে? উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ৪ঠা জুন পর্যন্ত।