মাছ বাঙালির প্রিয় খাদ্য, আর “মাছে ভাতে বাঙালি” প্রবাদটি তো যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। তবে মাছ খাওয়ার সময় ছোট-বড় নির্বিশেষে গলায় কাঁটা আটকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক কী করা উচিত, তা নিয়ে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই।
গলার কাঁটা দূর করতে অদ্ভুত সব কুসংস্কার প্রচলিত আছে। কেউ হয়তো বিড়ালের পা ধরতে বলেন, আবার কেউ ওঝা-কবিরাজের ঝাড়ফুঁকের মতো অপচিকিৎসার শরণাপন্ন হন। গলায় মাছের কাঁটা বিঁধলে যে কতটা কষ্ট হয়, তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। তবে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই অনেক সময় এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এক মুঠো ভাত: নরম কাঁটা তাড়ানোর দাওয়াই
গলায় মাছের কাঁটা আটকে গেলে একদমই ঘাবড়াবেন না। প্রথমে এক মুঠো সাদা ভাত নিন এবং সেটি চিবিয়ে না গিলে একবারে গিলে ফেলার চেষ্টা করুন। কাঁটা যদি ছোট ও নরম হয়, তবে ভাতের পিচ্ছিলতার কারণে সেটি সহজেই খাদ্যনালীর মাধ্যমে নেমে যেতে পারে। তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
অলিভ অয়েলের পিচ্ছিলতা: কাঁটা করবে কাবু
অলিভ অয়েলের বহুবিধ ব্যবহারের কথা আমরা জানি। তবে এটি যে গলায় মাছের কাঁটা ফুটলেও কাজে আসতে পারে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। গলায় কাঁটা বিঁধলে সামান্য ভক্ষণযোগ্য অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। অন্যান্য তেলের তুলনায় অলিভ অয়েল অনেক বেশি পিচ্ছিল হওয়ায় এটি গলায় আটকে থাকা কাঁটাকে নিচে নামিয়ে দিতে সহায়ক হতে পারে।
গরম জল ও লেবু: অ্যাসিডের জাদু
গলায় বিঁধে থাকা মাছের কাঁটা দূর করার জন্য গরম জল ও লেবুর রস একটি কার্যকর ঘরোয়া টোটকা। প্রথমে হালকা গরম জল করুন (সহ্য করার মতো)। এরপর তাতে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করুন। লেবুর অ্যাসিডিক উপাদান গলায় আটকে থাকা ছোট কাঁটাগুলোকে নরম করে ফেলতে এবং সহজে নামিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে।
ভিনেগার: আরেকটি অ্যাসিডিক সমাধান
যদি আপনার বাড়িতে ভিনেগার থাকে, তবে অল্প পরিমাণে ভিনেগার জলের সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। ভিনেগারের অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্যও মাছের কাঁটা নরম করে গলা থেকে নামাতে সাহায্য করে। তাই সামান্য জলের সাথে ভিনেগার মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
লবণ জলের ব্যবহার: সহজ ও কার্যকর
গলায় মাছের কাঁটা দূর করার জন্য লবণও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে শুধু লবণ না খেয়ে হালকা গরম জলের সাথে মিশিয়ে খান। প্রথমে হালকা গরম জল নিন এবং তাতে অল্প লবণ মেশান। এরপর সেই লবণ মিশ্রিত জল ধীরে ধীরে পান করুন। লবণ মিশ্রিত জল পান করলে গলার পেশি শিথিল হতে পারে এবং আটকে থাকা কাঁটা সহজে নেমে যেতে পারে।
গলায় মাছের কাঁটা আটকালে আতঙ্কিত না হয়ে এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করতে পারেন। তবে কাঁটা যদি বড় হয় বা অনেকক্ষণ ধরে অস্বস্তি থাকে, তাহলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কুসংস্কার বা অপচিকিৎসার শরণাপন্ন না হয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।