তরুণ বয়সের কিছু অভ্যাস প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে।
গর্ভধারণ কিছু দম্পতির জন্য সহজ আবার কারও জন্য হয় খুবই জটিল।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্ব জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ শতাংশ প্রজননক্ষম বয়সেও গর্ভধারণের ক্ষেত্রে নানান প্রতিকুলতার মুখোমুখি হন। আর সময়ের সঙ্গে এই সংখ্যা ক্রম বর্ধমান।
রোগ, মাদক সেবন, জীবনযাত্রার বিভিন্ন বদভ্যাস, কিছু রাসায়নিক উপাদানের ক্ষতিকর প্রভাব ইত্যাদি নানান কারণে এমনটা ঘটে।
জীবনযাত্রার যে ভুল অভ্যাসগুলোর কারণে পরিণত বয়সে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে, তরুণ বয়সে সেগুলো নিয়ে মানুষের সচেতন থাকে না।
ধূমপান: ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ধূমপায়ী-অধূমপায়ী সবাই অবগত। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি নারী-পুরুষ দুইয়ের প্রজনন ক্ষমতাকে মারাত্মক হারে ক্ষতিগ্রস্ত করে এই অভ্যাস। অনেকের ধারণা যারা নিয়মিত ধূমপান করেন শুধু তারাই ক্ষতির শিকার হন।
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, কালেভদ্রে ধূমপান করা, এমনকি ধূমপায়ীর আশপাশে থাকার কারণে পরোক্ষ ধূমপানও প্রজনন ক্ষমতার ক্ষতি করে। ধূমপানের কারণে নারীদের রজঃবন্ধ হয়ে যায় সময়ের আগেই। আর পুরুষের বীর্জের মান কমে যায়।
গৃহস্থালীর রাসায়নিক উপাদানের ব্যবহার: বাতাসের বিভিন্ন দূষিত উপাদান, কীটনাষক, রাসায়নিক পরিষ্কারক ইত্যাদিতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান প্রজনন ক্ষমতা কমাতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখে। রাসায়নিক উপাদানের প্রভাবে গর্ভধারণের ক্ষমতা নষ্ট হওয়া সম্ভবনা হতে পারে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত। এজন্য গৃহস্থালীর যেকোনো পণ্য কেনার সময় দেখতে হবে তাতে ‘পিসিবি’, ‘থ্যালেটস’, ‘ফুরান’ ইত্যাদি আছে কি-না। এই উপাদানগুলোই বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির জন্য দায়ী আর ঘর পরিষ্কার করার অনুসঙ্গ ও প্রসাধনীতে এদের উপস্থিতি দেখা যায় প্রায়শই।
মানসিক চাপ: মানসিক চাপ নিয়ে নানান কথা বলা হলেও খুব কম মানুষই তা সামাল দিতে পারেন কিংবা চেষ্টা করেন। আধুনিক জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যেন এই ‘মেন্টাল স্ট্রেস’। গর্ভধারণের পথেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য বাধা। কারণ মানসিক চাপগ্রস্ত অবস্থায় শরীরের যে হরমোনগুলো নিঃসৃত হয় সেগুলো প্রজনন ক্ষমতাকে দমিয়ে রাখে। নারী-পুরুষ উভয়ই শিকার হন। ফলে গর্ভধারণ জটিল হয়ে ওঠে।
যৌনসঙ্গম সংক্রান্ত সমস্যা: অনিরাপদ যৌনসঙ্গমের কারণে ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ’য়ের আশঙ্কা বাড়ে। এই সংক্রামক রোগগুলো নিজের জীবনের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি পৃথিবীতে নতুন জীবন নিয়ে আসার জন্যও ক্ষতিকর। বেশিরভাগ যৌনরোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ থাকে না। ফলে চিকিৎসা নেওয়া হয় না সময় মতো। আর পরে তা প্রজনন তন্ত্রকেই নষ্ট করে ফেলে। যৌনরোগের কারণে বন্ধ্যাত্বের শিকার হওয়ার ঝুঁকি নারীদের বেশি।
অতিরিক্ত কফি: চা কফি আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। তবে দিনে তিন থেকে চার কাপের বেশি কফি পানের অভ্যাস থাকলে তা এখনই কমাতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ‘ক্যাফেইন’ শরীরে প্রবেশ করলে তা শুক্রাণু উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নারীর ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। গর্ভধারণের সম্ভাবনা তো কমায় পাশাপাশি গর্ভপাতের আশঙ্কাও বাড়ায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। তাই দিনে দুই কাপ বা ২৫০ মি.লি.গ্রাম কফির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।